খাদ্য বিভাগের বহু অপকর্মের হোতা মনোতোষ মজুমদার রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে

মনোতোষ কুমার  মজুমদার ।খাদ্য বিভাগের  আলোচিত সমালোচিত  নাম।  বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সংশ্লিষ্ট বিভাগে বদলী বাণিজ্যসহ এমন কোন অপকর্ম  নেই যার সাথে  তিনি জড়িত ছিলেন না। মাগুরা জেলার ভারপ্রাপ্ত ভিসিফুড হলেও খাদ্য মন্ত্রীর জামাইয়ের সাথে সখ্যতা থাকায় সারা দেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগে তার ছিল একক আধিপত্য । এমনকি  নামের পদবীর সাথে খাদ্য মন্ত্রীর নামের পদবী “মজুমদার” মিল থাকায়  তিনি নিজেকে মন্ত্রীর বংশধর বলেই পরিচয় দিতেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,  মাগুরা জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কমকতা  মনোতোষ কুমার মজুমদারের বিরুদ্ধে দুনীর্তি ও অনিয়মের শেষ  নেই । যশোর ও নড়াইলের দায়িত্ব পালনকালে তিনি দুনীর্তি ও অনিয়ম  করে টাকার পাহাড়  গড়ে  তোলেন। তাকে  শাস্তিমূলক  বদলী করা হলে তিনি থাকেন নিই। সব শেষ মাগুরা জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য অফিসার হিসেবে যোগদানের পর মনোতোষ কুমার মজুমদার অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। খাদ্য মন্ত্রী সাধন
 চন্দ্র   মজুমদারের জামাই মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ মাগুরা জেলা প্রশাসক  হিসাবে যোগদান করলে তার সাথে গড়ে তোলেন গভীর সখ্যতা । যোগদানের দিনই জেলা প্রশাসকের জন্য  ফুলের তোড়া ও ব্লেজারসহ লক্ষাধিক টাকার উপহার নিয়ে মনোতোষ মজুমদার মাগুরা ডিসি অফিসে হাজির হন। ওই উপহারের বদৌলতেই জেলা প্রশাসকের নেক নজরে আসেন মনোতোষ মজুমদার । সেই থেকেই  সংশ্লিষ্ট বিভাগে মনোতোষ কুমার মজুমদারের একক আধিপত্য  শুরু হয়। খাদ্য মন্ত্রীর পরে তার কথায়  বদলীসহ নানা অনিয়ম শুরু  হয় । বিশেষ করে খাদ্য  বিভাগের  সবচেয়ে সুবিধাজনক জায়গা হচ্ছে  গুদাম।  পনেরো থেকে পঁচিশ লাখ টাকার বিনিময়ে গুদামে ইনচার্জ করা হয়ে হয়েছে । গুদামের আয়তন অনুসারে নির্ধারণ  করা হয়েছে টাকার রেট। আর মনোতোষ কুমার মজুমদার  খাদ্য  মন্ত্রীর জামাইয়ের   সাহায্যে তা সহজেই  বাস্তবায়ন করেছেন । তাকে অনৈতিক সুবিধা  দিয়ে গুদামে দায়িত্ব  নিয়ে নানা অপকর্ম  করতে বাধ্য  হয়েছেন ইনচার্জরা। অনেক ইনচার্জ গুদাম লোপাটও করেছেন ।
সুত্র বলছে,  গুদামে দায়িত্ব পালনে ইচ্ছুকদের সাথে দর কষাকষি করে সব চেয়ে  বেশি টাকার  বিনিময় খাদ্য মন্ত্রীর জামাইকে দিয়ে সুপারিশ করে বদলীর ব্যাবস্থা  করেছেন মনোতোষ কুমার মজুমদার । অনেকেই ওই টাকা  দিয়ে  পোষ্টিং  নিয়ে  বিপদের পড়েছেন । দুই বছর শেষ হওয়ায় আগেই পুনরায় আবার টাকার বিনিময়ে নতূন করে পোষ্টিং দেয়া হয়েছে ।  এভাবে  বদলীর মাধ্যমে  কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মনোতোষ কুমার মজুমদার । পেশাগত দায়িত্ব পালনের  চেয়ে  তিনি বিগত বছরগুলোতে  বদলীর তদবীরে বেশি  ব্যস্ত  ছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের  একাধিক  কমকতা নিশ্চিত করেছে।
সুত্র বলছে  বদলী  বাণিজ্য  ছাড়াও  মনোতোষ মজুমদার খাদ্য  বিভাগের নানা অনিয়ম  করেও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাগুরা  দুই  আসনের  সংসদ সদস্য  বীরেন শিকদারের  ছোট  ভাই  বিমল শিকদারের সাথে যোগসাজশ  করে সংশ্লিষ্ট  জেলা ধান চাল কেনায় লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতার দোহাই  দিয়ে রক্ষা  পেয়েছেন।
আড়পাড়া গুদাম থেকে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার সম্পদ গায়েবের ঘটনার   গুদাম কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামকে ফাঁসিয়ে   ভারপ্রাপ্ত ডিসি ফুড মনোতোষ কুমার মজুমদার রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে ।
খাদ্য বিভাগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মাগুরার ভারপ্রাপ্ত ডিসি ফুড মনোতোষ কুমার  গুদাম কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের উপর সমস্ত দায় চাপিয়ে দিয়ে নির্দোষ সাজার চেষ্টা করছেন। অথচ এই ঘটনার মাষ্টার মাইন ছিলেন  তিনি নিজেই । মাসের পর মাস গুদাম ইনচার্জকে   চাল চুরি করার সুযোগ করে দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। এরপর তদন্তের ভয় দেখিয়ে লোপাটের সমুদয় টাকা হাতিয়ে নিয়ে গুদাম ইনচার্জকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি ১৫ দিন পর পর গুদামের স্টক যাচাই করে স্বাক্ষর করার কথা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের। আর এক মাস পরপর যাচাই করে স্বাক্ষর করবেন ডিসি ফুড। আড়পাড়া খাদ্য গুদামে    দীর্ঘদিন ধরে কোটি টাকার সরকারি সম্পদ গুদাম কর্মকর্তা বাইরে বিক্রি করে দিলেও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা সালমা চৌধুরী ও ডিসি ফুড মনোতোষ মজুমদারের কোনো মাথাব্যথা ছিল না।
সূত্রের দাবি, ডিসি ফুড মনোতোষ মজুমদার প্রতি মাসে গুদাম কর্মকর্তা শফিকুল  ইসলামের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে তাকে এই ধরনের সুযোগ করে দেন। এমনকি সর্বশেষ তিনি কিছুই হবে না বলে অভয় দিয়ে শফিকুলের কাছ থেকে টাকা নেন বলে সূত্রের দাবি।
এদিকে, মনোতোষ মজুমদারের বিরুদ্ধে আরো নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। মাগুরা ছাড়াও পূর্বের বিভিন্ন কর্মস্থলে তিনি যে নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড করেন তা নিয়েও মুখ খুলছেন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক  সাবেক একজন গুদাম ইনচার্জ বলেছেন, সম্প্রতি  বিভিন্ন গুদামে ঘাটতির জন্য  মনোতোষ মজুমদার  অনেকটা দায়ী। তাকে অনৈতিক সুবিধা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে  হয়েছে  ইনচার্জদের। এরপর নির্ধারিত সময়ের আগেই  সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ায় অনেকেই  বাধ্য হয়েছেন বড় ধারনের অনিয়ম  করতেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগের জন্য মাগুরা জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য অফিসার মনোতোষ কুমার মজুমদারের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি ।
এ ব্যাপারে  অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত  মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে  যোগাযোগ  করা হলে  তিনি বলেন, কোন  অনিয়ম  করে পার পাওয়ায় সুযোগ নেই । তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে l