কেশবপুরে খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, ২০ গ্রামে জলাবদ্ধতা

garজাহিদ আবেদীন বাবু, (কেশবপুর) যশোর: যশোরের কেশবপুরের সীমাস্তবর্তী ময়নাপুর খাল প্রভাবশালীরা দখল করে মাছের ঘের কারায় ৩ উপজেলার ২০ গ্রামের জলাবদ্ধতা অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। পানি নিষ্কাশন পথ না থাকায় ওই এলাকার ১০টি বিলের শত শত হেক্টর জমিতে এক যুগ ধরে আউশ, আমন আবাদ বন্ধ রয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে একটি ঈদগাহ, ৩টি শ্মশান ও ৬টি ইটের সোলিং রান্তা। এলাকাবাসি খালটি দখল মুক্ত করতে একাধিক দপ্তরে আবেদন করেও কোন প্রতিকার মেলেনি।

জানা গেছে, কেশবপুর, মনিরামপুর ও ডুমুরিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী শ্রীনদীর ময়নাপুর নামক স্থান থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার একটি খাল ডায়েরখাল হয়ে বিল খুকশিয়ায় গিয়ে মিশেছে। ৩ উপজেলার সানতলা, কিসমতসানতালা, আড়ুয়া, ডুমুরিয়ার মান্দ্রা, মনিরামপুরের কুমোরডাঙ্গাসহ ২০ গ্রামের বর্ষার অতিরিক্ত পানি এই খাল দিয়ে শ্রীনদী হয়ে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। এ খালের পানি দিয়ে আবাদ হতো ১০/১২ বিলের শত শত হেক্টর জমিতে আউশ, আমন ও বোরো আবাদ। ২০০৫ সালের দিকে ওই খালে আড়া আড়িভাবে বাঁধ দিয়ে দখল করে মাছ চাষ শুরু করে ডুমুরিয়া উপজেলার তপন মন্ডল, মান্দ্রা গ্রামের মশিয়ার রহমান, কেশবপুরের তাপস মন্ডল, বারেন্দ্র নাথ মন্ডল, উজ্জ্বল মন্ডলসহ ১০/১২ জন ব্যক্তি।

প্রশাসনের দেখভালের অভাবে পর্যায়ক্রমে পুরো খালটিই দখলদারদের দখলে চলে যায়। সেই থেকে পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে কেশবপুর, মনিরামপুর ও ডুমুরিয়া উপজেলার ময়নাপুর, সানতলা, কিসমতসানতলা, কালিচরণপুর, আড়ুয়া, কুমোরডাঙ্গা, মান্দ্রাসহ কমপক্ষে ২০ গ্রাম প্রতিবর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ থাকে। এ সুযোগে স্থানীয় ধর্ণাঢ্যরা জলাবদ্ধ বিলগুলিতে মাছের ঘের করায় শত শত জেলে পরিবার বেকার হয়ে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ওই খালের ৭/৮ জায়গায় মাটির বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ করা হয়েছে।

এলাকার কৃষক কালিপদ সরকার বলেন, এক সময় ওই খালের পানি সেচ দিয়ে ১০/১২টি বিল এলাকার হাজারও কৃষক আউশ, আমন ও বোরো আবাদ করতো। বর্তমান খালটি এলাকার প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়ায় তাঁরা বর্ষার অতিরিক্ত পানি ও বিলের পানি ওই খাল দিয়ে নিষ্কাশন করতে দেয় না। এমনকি বোরো মৌসুমে ধান চাষ করতেও খালের পানি ব্যবহার করতে দেয়া হয় না। ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পেহাতে হয়। বিলগুলিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় প্রতি শুষ্ক মৌসুমে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে পানি নিষ্কাশন করে কৃষকদের বোরো আবাদ করতে হয়।

স্থানীয় মেম্বার আলমগীর হোসেন বলেন, ময়নাপুর সরকারি খালে সারা বছর পানি আটকে রাখার কারণে এলাকার একটি ঈদগাহ ও ৩ শ্মাশান ধসে নষ্ট হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে ৬টি ইটের সোলিং রাস্তা। জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ক্ষতিগ্রস্থরা প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের বিভন্ন দপ্তরে আবেদন করলেও অদ্যাবধি কোন প্রতিকার মেলেনি। তিনি খালটি উন্মুক্তসহ পুনর্খনন দাবি করেন।

আওয়ামী লীগ নেতা জিএম সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, এলাকার চেয়ারম্যান ওই সমস্ত দখলদারদের মদদ দিচ্ছেন। যার কারণে দখলদারা বহাল তবিয়াদে সরকারি খালে মাছ চাষ করে যাচ্ছে। এলাকার চেয়ারম্যান মাস্টার আব্দুস সামাদ তাঁর মদদ দেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, জনস্বার্থে খালটি উন্মুক্ত হোক তা আমিও চাই। প্রয়োজনে প্রশাসনকে সহযোগিতা করে খালটি উন্মুক্ত করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবির হোসেন (ভারপ্রাপ্ত) সাংবাদিকদের জানান, এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ তিনি পাননি। তাছাড়া ওই খাল কোন ব্যক্তিকে ইজারা দেয়া হয়নি। অচিরেই সরেজমিনে তদন্ত করে দখলদারদের উচ্ছেদ করে খালটি অবমুক্ত করা হবে।