মেসি যেন ম্যারাডোনা, সাম্পাওলি যেন বিলার্দো

স্পোর্টস ডেস্ক: মাঠে তার রণনীতি ঝড় তোলার আগে বিতর্কের ঝড় তুলেছিল আর্জেন্টিনা কোচের একটি মন্তব্য। যখন তিনি বললেন, লিওনেল মেসি সুস্থ থাকলে আর্জেন্টিনা ওরই দল, আমার নয়।’অনেকেই যা শুনে সমালোচনা শুরু করে দেন হোর্হে সাম্পাওলির। বলা হয়, তারকা প্রথার সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করা কোচ তিনি। কেউ কেউ বলে ফেললেন, ‘মেসি যা চান, তা-ই করে। মেসি থাকবেনই। বাকিরা থাকতেও পারেন, না-ও পারেন।’

সাম্পাওলিকে কিন্তু বিতর্কের ঝড়ও টলাতে পারেনি। তিনি তার বক্তব্যে অনড়। বললেন, যে চৌম্বক আকর্ষণ মেসিকে কেন্দ্র করে দেখা যায়, তার তুলনা পেতে গেলে অন্য গ্রহে পাড়ি দিতে হবে।

রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য আর্জেন্টিনার প্রাথমিক দল দেখে অনেকে মন্তব্য করলেন, পর্দার আড়ালে ‘সুপার সিলেক্টর’ মেসিই। যাকে মেসির পছন্দ, তিনি দলে জায়গা পেয়েছেন। যাকে চান না, তার জায়গা হয়নি। কোচ তো আগেই তার কাছে হার মেনেছেন। তিনি আর কী প্রতিবাদ করবেন?

আর্জেন্টিনার ফুটবলমহলে অভিজ্ঞ কেউ কেউ কিন্তু সাম্পাওলির মেসি-বন্দনাকে আক্রমণ করতে নারাজ। তাদের যে মনে পড়ে যাচ্ছে পুরনো এক যুগলবন্দির কথা! বিখ্যাত সেই কার্লোস বিলার্দো এবং দিয়েগো ম্যারাডোনার জুটির স্বর্ণযুগ। যারা শেষবার আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন।

১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্যেও ছিল একই প্রশ্রয়ের কাহিনী। তখন কোচ হিসেবে বিলার্দো এভাবেই ম্যারাডোনাকে দলের মুখ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। নিজে নামি কোচ হওয়া সত্ত্বেও পর্দার আড়ালে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। আর্জেন্টাইন ফুটবল সাংবাদিক এবং বিশেষজ্ঞদের কথায় পরে জানাজানি হয় যে, বিশ্বকাপে রওনা হওয়ার আগে বিলার্দো বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, দিয়েগো সবার উপরে।

সবার জন্য এক নিয়ম, দিয়েগোর জন্য আর এক। অনেকটা সেই সুরেই মেসিকে নিয়ে সাম্পাওলি বলেছেন, ‘এটা মেসির দল। তাই মেসি নিশ্চিত। বাকিদের বেছে নিতে হবে।’

রাশিয়ায় অংশ নিতে যাওয়া ৩২ দলের কোনো কোচকে এমন কথা বলতে শোনা যায়নি। বিলার্দোর টোটকা দুর্দান্তভাবে কাজে দিয়েছিল। কোচের আস্থার সম্পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে অবিশ্বাস্য ফুটবল উপহার দেন ম্যারাডোনা। কার্যত একাই বিশ্বকাপ এনে দেন দেশকে।

ম্যারাডোনার অতি বড় সমালোচকরাও মেনে নেন, তাকে ছাড়া ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জিততে পারত না আর্জেন্টিনা। কারও কারও তাই মনে হচ্ছে, বিলার্দোর ইতিহাসকে অনুসরণ করে এগোচ্ছেন সাম্পাওলি।