জেল থেকে বের হয়ে স্ত্রীকে প্রাণনাশের হুমকি ব্যাংক কর্মকর্তার

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ মার্কেন্টাইল শাখার কর্মকর্তা মো. ফারুক আহম্মেদ ১০ লাখ টাকার যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী তানজিদা সুপ্তাকে একাধিকবার নির্যাতন করে আসছেন। নির্যাতনের মাত্রা সইতে না পেরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তিনি। ২৯ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পর পুলিশ ফারুককে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়।

গত কয়েকদিন আগে জেল থেকে বের হওয়ার পর স্ত্রীকে তালাকসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছেন পাষণ্ড এ স্বামী। একই সঙ্গে মামলা প্রত্যাহার না হলে এসিড মেরে হত্যার হুমকি দেন বলে মানবকণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন নির্যাতিত স্ত্রী তানজিদা সুপ্তা। তিনি বলেন, বিশ বছরের সংসার ভেঙে দেয়ার জন্য পরকীয়া আসক্ত হয়ে ব্যাংক কর্মকতা ফারুক এসব কাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিকার পাওয়ার জন্য আদালতে শরণাপন্ন হলেও আসামি জেল থেকে বের হয়ে তাকে আবারো নির্যাতনের পাশাপাশি তার ১৬ বছরের ও’ লেভেল পড়ুয়া ছেলে তাবীব তাজওয়ার ও ক্লাস সেভেনে পড়–য়া মেয়ে ফাদিলা ফাইজা আহম্মদকেও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। ফলে তিনি সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।

এদিকে মামলায় বলা হয়, তানজিদা সুপ্তা (৪২) ও মো. ফারুক আহাম্মেদের ইসলামী শরিয়ত মতে বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে আসামি ফারুক ওই ব্যাংকেরই কর্মকর্তা শারমিনের (৩২) পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন।

মামলায় আরো বলা হয়, তানজিলা নামে মেয়েটির প্ররোচনায় পড়ে তার স্বামী ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছেন। স্বামী প্রায় সময় যৌতুকের জন্য তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। সংসারের সুখের জন্য সুপ্তা নিজের উপার্জিত অর্থসহ ভাই বোনদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা স্বামী ফারুক আহম্মদকে দেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি সুপ্তার। সংসার ভেঙে দেয়ার মর্মে পরকীয়া জড়িয়ে পড়েন ফারুক। শুরু করেন স্ত্রীর ওপর দিনের পর দিন নির্যাতন। ১৫ জানুয়ারি পাষণ্ড স্বামী ফারুক ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রী সুপ্তার চুলের মুঠি ধরে এলোপাতাড়ি মারপিট করাসহ লোহার পাইপ দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন। এসময় দুই হাত জখমসহ পুরো শরীর মারাত্মক জখমে রূপ নেয় তার। সেই সময় ছেলে ও মেয়েসহ সুপ্তার আত্মীয়-স্বজন তাকে ঢাকা মেডিকেলে ওসিসিতে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করান। পরে ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় আবারো নূর জাহান রোডের বাসায় স্বামী ফারুক আহম্মদ স্ত্রী সুপ্তাকে কিল ঘুষি মেরে পুরো শরীর যখম করে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। ওই সময়েও মেয়ে ও ছেলের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে সুপ্তাকে উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। এখন তার চিকিৎসা চলছে।

অপরদিকে নির্যাতনের মাত্রা সইতে না পেরে স্বামীর বিরুদ্ধে মোহাম্মাদপুর থানার এফআইএর নং-১১০/৪৫৫ তারিখে ২৯ এপ্রিল ২০১৮, ধারা-১১ (গ)/৩০-২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩ মামলা দায়ের করেন সুপ্তা। মামলার পর আসামি ফারুক আহম্মদকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়।

এদিকে আসামি ফারুক আহম্মেদ জেল থেকে বের হয়ে প্রতিদিন বিভিন্নভাবে বাদিনীকে মামলা প্রত্যাহারসহ হত্যার হুমকি দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করেন স্ত্রী সুপ্তা। তিনি বলেন, আমি ডেফোডিল ইউনিভার্সিটিতে পার্টটাইম জব করছি। ছেলে ও মেয়েকেও সে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন। সুপ্তা বলেন, এ ব্যাপারে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহযোগিতা কামনা করছি।

সূত্র: মানবকণ্ঠ