ইয়াবায় ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফাঁসলেন এএসআই!

ডেস্ক রিপোর্ট: নরসিংদীতে থানা হাজতে নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগে শিবপুর থানার সহকারী উপপরিদের্শক (এএসআই ) সোহেল রানাসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন এবং থানা হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে এ মামলা করা হয়।

মামলায় এএসআই সোহেল রানার বিরুদ্ধে পুলিশ সহকর্মী ও আওয়ামী লীগ নেতাকে ফাঁসানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন, শিবপুর থানার এসআই রিজাউল কাজী ও এএসআই মামুন এবং মনোহরদী থানার এসআই নাজিম ও এএসআই শাহীন সরকার।

এদিকে সাজানো স্বীকারোক্তি আদায়ের ঘটনার প্রাথমিক সত্যতার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার বিকেলে এএসআই সোহেল রানা, কনস্টেবল মামুন ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই খোকন চন্দ্র সরকারকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

মামলার এজাহার, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এএসআই সোহেল রানা এর আগে মনোহরদী থানায় কর্মরত ছিলেন। সেখানে থাকার সময় গত ৭ এপ্রিল বড়চাপা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহাগকে হয়রানি করেন। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ওই হয়রানির প্রতিবাদ জানান। এএসআই সোহেল রানা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলে তাকে মনোহরদী থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে তিনি শিবপুর থানায় যোগ দেন।

এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিবপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে এএসআই সোহেল রানা প্রাইভেট কারসহ আবুল কালাম ও হিমেল নামের দুজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে রাতে কালামের স্বজনরা থানায় গিয়ে তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে দেখতে পায়।

ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি, ওই সময় এএসআই সোহেল তাদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা দাবি করেন, অন্যথায় কালামকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকি দেন। ওই টাকা না পেয়ে পিটিয়ে কামালের হাত ভেঙে দেওয়া হয়। পরে ভোররাতে চোখ বেঁধে নির্জন স্থানে নিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগের তিন নেতাকর্মী ও গোয়েন্দা পুলিশের এসআই খোকন চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার জবানবন্দী আদায় করে তা মুঠোফোনে রেকর্ড করে।

ওই সময় ৫৫ হাজার টাকার বিনিময়ে আটক হওয়া হিমেলকে ছেড়ে দিলেও ২৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে আবুল কালামকে কারাগারে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে মনোহরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাসেম ও এক দুয়ারিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ফরিদ আলম ভূঁঞাকে মামলায় পলাতক আসামি করা হয়।

এ বিষয়ে মনোহরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল আলম বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমার ঘনিষ্ট। এ কারণে এএসআই সোহেল ছাত্রলীগের সভাপতির ওপর প্রতিশোধ নিতে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। এর পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধনও থাকতে পারে।’

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই খোকন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আমি চলতি বছর জেলার সেরা মাদক উদ্ধারকারী হিসেবে তিনবার পুলিশ সুপারের নিকট পুরস্কৃত হয়েছি। এএসআই সোহেল ছাত্রলীগের ছেলেকে হয়রানি করে প্রত্যাহার হওয়ার সময় আমিও বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আর এই ক্ষোভ থেকেই সে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত করে আমাকে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় জড়িয়েছে বলে আমার ধারণা।’

হয়রানীর শিকার আবুল কালামের স্ত্রী ও মামলার বাদী সোমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মাদক ব্যবসা তো দূরের কথা, কখনো মাদক সেবনও করেনি। তার বিরুদ্ধে অতীতে থানায় কোনো মামলাও নেই। আর দুই লাখ টাকার জন্য সেই লোকটিকে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়েছে এএসআই সোহেল। আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে এএসআই সোহেলের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে এএসআই সোহেল রানা জানান, থানায় কাউকে নির্যাতন করা হয়নি। ঘটনার সঙ্গে হিমেলের সম্পৃক্ততা না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।

নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি শুনে মিটিংয়ে আছেন বলে জানান। সূত্র: আমাদের সময়