নতুন ৭৬ দলের ৭০টিই নিবন্ধনের অযোগ্য!

ec vobonডেস্ক রিপোর্ট: নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ৭৬টি নতুন রাজনৈতিক দলের করা আবেদন যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনার কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। সংস্থাটির দল বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা কমিটি চলতি সপ্তাহেই তাদের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করবে। নিয়মানুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের ছয় মাস আগে নতুন দলের নিবন্ধন কাজ সম্পন্ন করতে হয়। সে হিসেবে এ মাসেই যোগ্যদের নিবন্ধন করে নেবে ইসি। তবে এবার সে সংখ্যা হবে একেবারেই হাতেগোনা।

বাছাই প্রক্রিয়ার কাজে সম্পৃক্তরা জানিয়েছেন, আবেদন করা নতুন ৭৬টি দলের মধ্যে ৭০টিরই নিবন্ধন পাওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা নেই। নিবন্ধনের শর্ত পূরণ তো দূরের কথা, প্রাথমিক তথ্যাদিও সঠিকভাবে দিতে পারেনি অনেক দল। আবার অনেক দলের নেতাকর্মী একজনই। জেলা-উপজেলায় অফিস তো নেই, প্রধান কার্যালয়ও নেই অনেকগুলোর। নিবন্ধনের আবেদনে ব্যবহার করা হয়েছে বাসা কিংবা অফিসের ভুয়া ঠিকানা। একাদশ সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন চাইলে মোট ৭৬টি দল আবেদন করে। এর মধ্যে ১৯টি দল প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ যায়। বাকি ৫৬ দলকে ১৫ দিন সময় দিয়ে অসম্পূর্ণ কাগজপত্র জমা দিতে চিঠি দেয় ইসি। কিন্তু এগুলোর মধ্যে ৯টি দল (বাংলাদেশ মঙ্গল পার্টি, নাকফুল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পরিবহন লেবার পার্টি, বাংলাদেশ তৃণমূল পার্টি (বিটিপি), লিবারেল পার্টি-এলপি, মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিটি পার্টি, সোনার বাংলা উন্নয়ন লীগ, বাংলাদেশ রামকৃষ্ণ পার্টি ও ঐক্য ন্যাপ) সংশোধিত তথ্য না দিয়ে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। ফলে বাকি ৪৬ দলের তথ্য যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়। এসব দলের আবেদন পর্যালোচনার কাজ চলে পুরো মে মাস জুড়ে। ইসির নিবন্ধন যাচাই-বাছাই কমিটির চারটি উপকমিটি এসব দলের গঠনতন্ত্র, দলিলপত্র ও আনুষাঙ্গিক উপাত্ত যাচাই করে দেখে। এসব দলের অধিকাংশেরই তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে ত্রুটি পেয়েছেন বাছাই কমিটির সদস্যরা। তারা বলেছেন, মাঠ পর্যায়ে তদন্তে পাঠানো যায় এমন যোগ্য দলের সংখ্যা নিরূপণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে; এর পরও সর্বসাকুল্যে যোগ্য দলের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৫-৬টি।

দল বাছাই কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, অনেক দল কার্যালয়ের জন্য নেয়া বাড়ি ভাড়ার যে রশিদ জমা দিয়েছে তা মনগড়া। সারা দেশে একই ভাড়া উল্লেখ করা হয়েছে, যেটি কখনই সম্ভব নয়। বাড়ি ভাড়ার চুক্তির অঙ্গীকারনামা ১০০ উপজেলার সংখ্যা সমপরিমাণ দেয়ার কথা থাকলেও গুনে দেখা গেছে অনেক দল দিয়েছে ৮০টি। ঘরে বসেই তৈরি করা গঠনতন্ত্র জমা দিয়েছে কোনো কোনো দল। কেউ দিয়েছে অন্য দলের গঠনতন্ত্র কপি পেস্ট করে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকারনামায় অসঙ্গতি, অঙ্গ সংগঠন ও সহযোগী সংগঠন কী সে সম্পর্কে ধারণা না থাকা, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক গঠনতন্ত্র জমা দেয়া এবং সংশোধিত গঠনতন্ত্রের কপি জমা না দেয়ায় অনেক দল নিবন্ধনের যোগ্যতা হারিয়েছে বলে জানান তারা ।

নিবন্ধন শাখা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩০ অক্টোবর নতুন রাজনৈতিক দলকে আবেদন করার বিজ্ঞপ্তি জারি করলে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করে ৭৬টি দল। গত ৮ মার্চ দলগুলোর তথ্য যাচাই-বাছাই করে ১৯টি দলকে নিবন্ধনে অযোগ্য এবং ৫৬টি দলকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করে। তবে ৯টি দল তথ্য না দেয়ায় ইসির বাছাই থেকে ছিটকে পড়ে। বাকি ৪৬টি দলের তথ্য যাচাই করে নানা অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে বাছাই কমিটি। তবে, মান রক্ষার্থে কিছুটা শর্ত পূরণ করেছে এমন ৫-৬টি দলকে মাঠ পর্যায়ের তথ্য যাচাইয়ে পাঠানো হতে পারে। তবে সেটিও কমিশনের সিদ্ধান্তের পর। নিবন্ধন মিললে এসব দল আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।

সংসদ নির্বাচনের অন্তত ছয় মাস আগে নতুন দলের নিবন্ধন চূড়ান্ত করার পরিকল্পনার কথা এর আগে জানিয়েছিল ইসি। সেক্ষেত্রে এ সপ্তাহেই নিবন্ধন অযোগ্য দলগুলোকে চিঠি দিয়ে তা জানিয়ে দিতে হবে। কোনো দল নিবন্ধনযোগ্য হলে সে বিষয়ে আপত্তি নিষ্পত্তি করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে ইসিকে। সিইসি ও চার জন নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে কেউ কোনো দলের বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ব্যবস্থা চালুর পর ৩৮টি দল নিবন্ধিত হয়। এরপর নবম সংসদে দুটি এবং দশম সংসদে দুটি দল নিবন্ধন পায়। এ ছাড়া শর্ত পূরণ না হওয়ায় দুটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। সব মিলিয়ে এখন বাংলাদেশে ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে, যারা নিজস্ব প্রতীক নিয়ে দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে পারে। সূত্র: মানবকণ্ঠ