বিএনপির দিকে ঝুঁকছে যুক্তফ্রন্ট!

newsডেস্ক রিপোর্ট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে বিএনপির দিকে বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ঝুঁকছে যুক্তফ্রন্ট। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই জোট এখন কিছু অভিন্ন ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কথা ভাবছে। অর্থাৎ প্রাথমিকভাবে তারা একটি আন্দোলনের ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। উভয়পক্ষের নেতারা বলছেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এখন যেসব রাজনৈতিক দল সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথা ভাবছে তাদের ঐক্য জরুরি।

তবে যুক্তফ্রন্ট এবং বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উভয়ের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা শুধু আন্দোলনের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। তাদের মধ্যে ঐক্য হবে তিন স্তরে। অর্থাৎ একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন, সমঝোতার ভিত্তিতে আসন বণ্টন এবং বিজয়ী হলে সরকার গঠন। আর এসব ব্যাপারে সমঝোতার জন্য উভয়পক্ষের নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির সুহৃদ হিসেবে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী। এক্ষেত্রে ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরীর অবস্থান এখন অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। তিনি এখন বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানে বেশ খোলামেলাভাবেই অতীতের দুঃখ, ব্যথা, ক্ষোভ, যন্ত্রণা ভুলে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের আবেদন জানাচ্ছেন। আর এসবের ভিত্তিতে ২৯ মে বিকল্প ধারার ইফতার মাহফিলে যুক্তফ্রন্টকে ‘নিউক্লিয়াস’ অভিহিত করে সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তফ্রন্ট প্রধান বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

এদিকে যুক্তফ্রন্ট এবং বিএনপির এই সম্ভাব্য রাজনৈতিক সমঝোতা নিয়ে এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে চলছে জোর আলোচনা। জোটবদ্ধ আন্দোলন হলেও শেষ পর্যন্ত এই ঐক্য চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছবে কিনা- এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন খোদ যুক্তফ্রন্ট্রের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ। আবার যুক্তফ্রন্টের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সবাই দলছুট হওয়ায় তাদের ওপর অনেকেই আস্থা রাখতে পারছেন না।

এ জোটের শরিক দলগুলোর সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে কেউ কেউ ঠাট্টা করে একে ‘এতিম সমিতি’ হিসেবে অভিহিত করছেন। আর খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একে ‘জিরো প্লাস জিরো’ বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে যুক্তফ্রন্টের নেতারা নিজেদের ‘তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি’ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা চেষ্টার বিষয়টিকেও অনেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না।

তারা বলছেন, ৯০-এর দশকের শেষদিকে দ্বি-দলীয় রাজনৈতিক ধারার বাইরে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ১১ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তারা তাদের অবস্থানে বেশি দিন ক্রিয়াশীল থাকেননি। তারা এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অংশীদার। এখন যুক্তফ্রন্ট ঝুঁকছে বিএনপির দিকে। অর্থাৎ দ্বি-দলীয় ধারার বাইরে আপাতত কেউ খুব একটা সুধিবা করতে পারছেন না। তৃতীয় শক্তির শেষ গন্তব্য হচ্ছে বড় দলের সঙ্গে ঐক্য।

তবে বিএনপির সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের রাজনৈতিক সমঝোতা বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তফ্রন্টের সদস্য সচিব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচন আন্দোলনের অংশ হতে পারে। এখন সবারই প্রশ্ন নির্বাচন কীভাবে হবে। আমরা চাই একটি অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সরকার যেভাবে চাইছে তাতে একটি অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। ফলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যারা আন্দোলন করছে তাদের সঙ্গে আমরা আন্দোলন করতে চাই। এটা নিজ নিজ অবস্থান থেকে হতে পারে, আবার যুগপৎ হতে পারে। অর্থাৎ এখন আমরা একটি আন্দোলনের কথাই বলছি।

এদিকে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা পেলে গণতন্ত্র মুক্তি পাবে উল্লেখ করে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৩০ মে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে গণতন্ত্র বাঁচাতে হলে আগামী নির্বাচন অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। এর আগের দিন ২৯ মে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতে আগামীতে দেশে কোনো রাজনৈতিক সংঘাত এড়াতে পাঁচ বছরের জন্য একটি জাতীয় সরকার গঠনের পাশাপাশি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবি জানান যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান, বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

তিনি বলেন, আগামীতে দেশে যাতে কোনো রাজনৈতিক সংঘাত না হয় সে জন্য পাঁচ বছরের জন্য একটি জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এমন লোক দেশের নেতৃত্বে থাকবেন যারা দেশের জন্য, জনগণের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য কাজ করবেন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। আপনি ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করবেন সেটি হবে না, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবিও জানান বি. চৌধুরী।

এতদিন এই জোট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু না বললেও ৩০ মে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বদু (বদরুদ্দোজা চৌধুরী) কাকার কি মনে নাই জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতা নিয়েছিলেন তখন যে হ্যাঁ/না ভোট দিয়েছিলেন, সেই নির্বাচনটা উনি কেমন দেখেছিলেন? এদের মুখে ভোটের কথা শুনলে পাগলেও হাসবে।’

তিনি বলেন, নতুন জোট করেছে ভালো কথা। বিন্দু বিন্দু থেকেই সিন্ধু হয়। তবে জিরো প্লাস জিরো, জিরোই হয়। কেউ ক্ষমতায় এসে অগ্নিসংযোগ করুক, এটা চাই না।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে নতুন রাজনৈতিক জোটের ঘোষণা দেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। চারটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামের এই রাজনৈতিক জোট। দলগুলো হলো- বিকল্পধারা বাংলাদেশ, আসম আব্দুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য। এই জোটে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম যোগ দেয়ার কথা থাকলেও এখনো তারা যুক্ত হননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, তিনি কোনো জোটে থাকবেন না। তাই গণফোরামকে এই জোটে রাখা হয়নি।

এদিকে যুক্তফ্রন্ট গঠনের পর এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে জোটের আত্মপ্রকাশের বিষয়টি জানানোর কথা থাকলেও অদ্যাবধি তা করা হয়নি। জোটের কাঠামো এবং কর্মসূচি বিষয়েও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। সূত্র: মানবকণ্ঠ