ভোটের আগে জনতুষ্টিই মূল লক্ষ্য

budget 2018 2019ডেস্ক রিপোর্ট: বর্তমান সরকারের শেষ বাজেট আগামী ৭ জুন বৃহস্পতিবার ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এক বছরের জন্য এই বাজেট হলেও সরকার সময় পাবে প্রথম ছয় মাস। অর্থাৎ ছয় মাস পরেই নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না। আর তাই কর চাপিয়ে দেয়ার মতো জনবিরোধী কোনো ঘোষণা বাজেটে থাকছে না। বরং করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হতে পারে। আবার ব্যবসায়ীদের খুশি করতে কমানো হতে পারে কর্পোরেট করহার। এর ফলে রাজস্ব আয়ে টান পড়ার শঙ্কা থাকলেও করজাল বাড়িয়ে তা পূরণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন অর্থমন্ত্রী। যদিও তাতে আস্থা পাচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরা। কারণ বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহীকভাবে কমেছে বাজেট বাস্তবায়নের হার। তবুও নির্বাচনের আগে জনতুষ্টিকেই মূল লক্ষ্য ধরে চার লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নির্বাচনের আগে ঝুঁকি না নেয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত করেছেন অর্থমন্ত্রী। কর ব্যবস্থায় তেমন কোনো পরিবর্তন আসছে না বলে তিনি জানিয়েছেন। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে যেমন ভ্যাট নিয়ে সরগরম ছিল সারাদেশ। এবার তা নেই। কারণ, চলতি বাজেট পাসের সময় প্রধানমন্ত্রী এই ভ্যাট আইন ২০১৯ সালে বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। কাস্টম আইনও পাস করানোর জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হচ্ছে না। বরং করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো এবং কর্পোরেট কর কমানোর ঘোষণার মাধ্যমে করদাতাদের খুশি করার উদ্যোগ থাকতে পারে। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে ভোটারদের সামনে উন্নয়ন দেখাতে বড় বড় প্রকল্পে এরই মধ্যে বরাদ্দ বেশি দেয়া হয়েছে। বড় ১০ প্রকল্পের বরাদ্দই ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ভাতা যেমন বাড়ানো হচ্ছে, বাড়ছে সুবিধাভোগীর সংখ্যাও।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মোট ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা বা বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে চার লাখ ৬৮ হাজার ২০৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে রাজস্ব আয়ের প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৪০ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এনবিআরের কর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে ৩ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা করা হয়। একে ভিত্তি ধরলে নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ৫৯ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে এনবিআর কর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা হলো দুই লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ১০ দশমিক ১ শতাংশ। এই হিসাবে এনবিআর থেকে আগামী অর্থবছরে কর আহরণের প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ৩২ শতাংশের বেশি। এনবিআর কখনোই রাজস্ব আদায়ে এত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি।

বরাবরের মতো আগামী বছরেও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট থেকে আদায় করতে হবে সবচেয়ে বেশি, ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এর পরই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আয়কর আদায় করা হবে ১ লাখ ২০০ কোটি টাকা। আর শুল্ক খাতে এনবিআরকে ৮৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য দেয়া হচ্ছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার দেশ-বিদেশ থেকে ঋণ নেয়, যার মধ্যে বেশি ঋণ নিয়ে থাকে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকেই। ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেও ভালো একটা টাকা সংগ্রহ করে সরকার। উন্নয়ন ব্যয় বাদ দিলে অনুন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে আগামী বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ঋণের সুদ পরিশোধ এবং ভর্তুকিতেই ব্যয় হয়ে যাবে এক-তৃতীয়াংশ। এর পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকার বেশি।

এই উচ্চাভিলাষী বাজেটকে সমর্থন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতির তুলনায় বাজেট বড় হওয়া স্বাভাবিক। তবে বাজেট বাস্তবায়নে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়ছি। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং করকাঠামো ঢেলে সাজানো দরকার।

এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিবছরই বড় লক্ষ্য ধরা হচ্ছে, কিন্তু বছর শেষে সেই লক্ষ্য আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে অটোমেশন ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের ক্ষেত্রে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ২০১৯ সাল থেকে নতুন আইন কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কাছে ইসিআর মেশিন সরবরাহ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, অনেকেই সরকারের নজরের বাইরে আছে, করসক্ষম ব্যক্তিদের করের আওতায় আনতে হবে। মানবকণ্ঠ