এমবিবিএস পাস চিকিৎসক যখন পেশাদার খুনি, অস্ত্র ব্যবসায়ী

doctor atokডেস্ক রিপোর্ট: ডা. মো. জাহিদুল আলম কাদির (৩৮)। ২০০২ সালে ময়মনসিংহ সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩ মাসের একটি ডিপ্লোমা কোর্স করেন। আর উচ্চতর পড়াশোনা করেননি। স্থায়ীভাবে সরকারি চাকরিও পাননি। ডিপ্লোমা করার পর তিনি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার একাধিক ক্লিনিকে কয়েক মাস চাকরি করেছেন। সেই চাকরি তার আর ভালো লাগেনি। এরমধ্যে জাহিদুলের অস্ত্র সংগ্রহ করা একটি শখে পরিণত হয়। শখ থেকে ব্যবসা শুরু। একপর্যায়ে চুক্তিভিত্তিক খুনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। কিছুদিন আগে লন্ডন থেকে এক ব্যক্তির বার্তা পেয়েছিলেন জাহিদুল।

সিলেট অঞ্চলে এক সংসদ সদস্যকে হত্যা করার জন্য ওই বার্তাটি পেয়েছিলেন। তবে কোন সংসদ সদস্যকে হত্যার চুক্তি হয়েছিল তা জানা যায়নি। এসব ঘটনার সম্পৃক্ততার কারণে স্ত্রী সুমা আক্তারসহ জাহিদুল আলম কাদিরকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম জানান, গত ১৫ই মে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে জাহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি পিস্তল ও ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করা হয়। আদালতের আদেশে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে গত ৩রা জুন গাবতলী এলাকা হতে তার স্ত্রী মাসুমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল ও ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দুজনের দেয়া তথ্যে গত বুধবার ময়মনসিংহ জেলার বাঘমারা এলাকার জাহিদুল আলম কাদিরের ফ্ল্যাট থেকে ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১ হাজার ৬১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গুলি তার নিজ বাসায় বিশেষভাবে তৈরি করা একটি স্টিল কেবিনেটের পেছনে লুকানো ছিল। তাদের কাছ থেকে মোট ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও মোট ১ হাজার ৬২২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে পয়েন্ট ২২ বোরের রাইফেল ৩টি, পয়েন্ট ৩০৩ রাইফেল ১টি, পয়েন্ট ৩২ বোর রিভলবার ৪টি, ২২ রিভলবার ১টি, ৭.৬৫ পিস্তল ৫টি ও পয়েন্ট ২৫ পিস্তল ১টি। উদ্ধারকৃত গুলির মধ্যে পয়েন্ট ৩০৩ রাইফেলের গুলি ১১০ রাউন্ড, পয়েন্ট ২২ রাইফেলের গুলি ১১০০ রাউন্ড, পয়েন্ট ৩২ রিভলবারের গুলি ৩৫৮ রাউন্ড ও পয়েন্ট ২৫ পিস্তলের গুলি ৫৪ রাউন্ড।
তিনি আরো জানান, ১৫টি অস্ত্রের মধ্যে ৪টি রাইফেল, ৫টি রিভলবার ও ৬টি পিস্তল। অধিকাংশ জার্মানি ও ব্রাজিলের তৈরি।

জাহিদুল আলম ২০০২ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর সরকারি বা স্থায়ী কোনো চাকরি করতো না। পড়াশোনার পর গ্রামের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চাকরি করত। চিকিৎসা পেশার অন্তরালে বিভিন্ন উৎস থেকে অবৈধভাবে লাইসেন্সবিহীন বিদেশি অস্ত্র সংগ্রহ করে বেশি দামে বিক্রি করতেন। বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি ও মেরামতে বিশেষভাবে পারদর্শী। এছাড়া বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে অস্ত্রের আকার আকৃতি পরিবর্তন এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে দক্ষ। পেশাদার কিলার হিসেবে তিনি বেশ কয়েক জায়গায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগেই তাকে গত মাসে গ্রেপ্তার করা হয়। জাহিদুল আলমের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসী এবং পেশাদার খুনিদের সখ্য ছিল। সিলেট ও কক্সবাজারের কিছু সস্ত্রাসীর সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনার পর অস্ত্র সংগ্রহ করা একটি শখে পরিণত হয়। নেশায় পরিণত হয়। নেশা থেকে একপর্যায়ে সে অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। অস্ত্র চালনার ক্ষেত্রেও তার দক্ষ নিশানা ছিল। এই অস্ত্র বিক্রয় করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন। পাশাপাশি কন্ট্রাক কিলিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

তিনি আরো জানান, জাহিদুল বেশ কিছু অস্ত্র বৈধ অস্ত্র বিক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যেসক বৈধ অস্ত্র বিক্রেতা তার কাছে অবৈধভাবে অস্ত্র বিক্রি করেছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

সদ্য কাউকে কাউকে খুনের পরিকল্পনা ছিল কি-না সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, জাহিদুল কিছুদিন আগে লন্ডন থেকে একটি কন্ট্রাক কিলিংয়ের বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হন। সিলেটের একজন এমপিকে হত্যা করার তার মিশন ছিল, তার আগেই তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।

জঙ্গিবাদের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা আছে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, যারা অবৈধভাবে অস্ত্র বিক্রয় করে থাকে তাদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ থাকে। জঙ্গিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, রাজধানীতে দুটি টিম কাজ করছে। গত ৩ মাসে ১০ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছে। আমরা এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করি না। প্রেস রিলিজ দিয়ে বিষয়টি অবগত করি। সংবাদ সম্মেলনে এসময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান, ডিএমপির ডিসি (স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ) প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার, ডিএমপির এডিসি (বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটি) মো. সানোয়ার হোসেন।