ডেস্ক রিপোর্ট: আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে ‘ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন’ দেখছেন সদ্য ভারত সফর করে আসা বিএনপি’র দুই নেতা। বাংলাদেশের রাজনীতি, নির্বাচন ও দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে ভারতের তিনটি থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠানের আয়োজিত সেমিনারে অংশ নেয়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু একথা জানান।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ভারতের বিভিন্ন থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান, সিভিল সোসাইটি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের যে সংকট তারা অনুধাবন করছেন এবং এটা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা আজকে তারা মনে করছে। আমি মনে করি এটা একটা ভালো দিক, ইতিবাচক পরিবর্তন। ভারত চায়, আগামীতে বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য অংশীদারিত্ব নির্বাচন।
বাংলাদেশের মানুষের যদি মতামত ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে এবং সেখানে যদি ভারতের ভূমিকা দৃশ্যমান হয়- সেটা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক বলে আমরা মনে করি।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র, জাতীয় নির্বাচনসহ সার্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা করছি, কথা বলছি। এটাও সে ধারাবাহিক আলোচনার অংশ। ভারতের সঙ্গে আলাদা করে কোনো আলোচনা হয়েছে তেমনটা নয়।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক স্পেস নেই। বাংলাদেশে যে নির্বাচনের কোনো স্পেস নেই। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তো দূরের কথা- এসব নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এর সঙ্গে নির্বাচনের প্রসঙ্গটি অবশ্যই জড়িত- এই কারণে যে, বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে জোর করে ক্ষমতায় যাওয়ার ও থাকার যে প্রচেষ্টা -এসব বিষয় সেমিনারে আমরা আমাদের বক্তব্য রেখেছি। তারাও শুনেছে। প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তাদের কাছে এটা আরো পরিষ্কার হয়েছে।
তিনি বলেন, একটা পারসেপশন আছে যে, জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে আজকে যারা স্বৈরশাসন চালাচ্ছে এবং এখানে আজকে যে আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক অধিকার ও বাক স্বাধীনতা নেই- এরকম একটি দলকে, সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থন আছে। যা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে একটা আস্থার সংকট তৈরি করে। এটা আলোচিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন, জনগণের ভোটাধিকার, আইনের শাসন চায় ভারত। জনগণের মনে যদি এই বিশ্বাসটা আসে তাহলে তো দুই দেশের সম্পর্কটা অনেকটা এগিয়ে যাবে। জনগণের পারসেপশনও পরিবর্তন হবে। ভারত ইতোমধ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলেছে।
খসরু বলেন, যারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায়, আইনের শাসন চায়, মানবাধিকার চায়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চায় এসব প্রত্যেকটা গণতান্ত্রিক দেশ তা বিভিন্নভাবে ব্যক্ত করছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও এসব ব্যক্ত করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্ট থেকে বলা হচ্ছে। এখানে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারতের সেই ভূমিকাটা অবতীর্ণ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাহলে বাংলাদেশের জনগণের বিশ্বাসের ঘাটতি তা অনেকটা কেটে যাবে।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশে যেসব প্রোপাগান্ডা হচ্ছে, যে মিথ্যাচার করা হচ্ছে তাও পরিষ্কার হয়ে গেছে। যেগুলোকে মূলধন করে আজকে যারা সরকারে আছে, তারা যেমন বাংলাদেশের ভেতরে কিছু জিনিস মূলধন করছে, তেমনি দেশের বাইরেও কিছু কিছু মূলধন করে সরকারে টিকে থাকতে চাচ্ছে তা বোঝা যায়।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, সেমিনারে আমাদের বক্তব্য তারা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। এটাকেই আমরা দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন বলতে চাই। আগে কিন্তু আমরা এতো মনোযোগ পাইনি। এটা হলো প্রথম একটা পরিবর্তন। কথাবার্তার মধ্য দিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দেখতে পেয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ বৃহৎ রাষ্ট্র চায় না যে, এমন একটা পারসেপশন তৈরি হোক- তাদের কোনো একটা পার্টিকুলার দলের প্রতি দরদ বেশি। তারা চাচ্ছেন যে, এবারে বাংলাদেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন হোক।
মিন্টু বলেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের মনে হয়েছে, ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি খুব পরিষ্কার। তারা চায় না এবার কোনোভাবেই কেউ প্রশ্ন উঠাক যে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কোনো হস্তক্ষেপ করছে। ভারত এটাও চায় না যে কেউ বলুক আমরা এই পার্টির প্রতি একটু বেশি দরদ দেখাচ্ছি বা ওই পার্টির প্রতি দরদ নেই- এটাও তারা চাচ্ছে না। আমি মনে করি এটা আমাদের জন্য উত্তম, ভারতের জন্যও ভালো। এই পয়েন্টে আমরা সবার সঙ্গে কথা বলেছি। বিদ্যমান পরিস্থিতি কতটুকু সহায়ক, কে কি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে সে বিষয়ে বিভিন্ন স্তরে আমরা কথা বলেছি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘সাজানো মামলা’য় কারাবন্দি করার বিষয়টিও ভারতীয় সঙ্গে আলোচনায় উঠেছে বলে জানান দুই নেতা।
ভারতের তিনটি থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন, রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি ও আগামী নির্বাচন’ শীর্ষক তিনটি সেমিনারে অংশ নিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত ৩রা জুন থেকে ১০ই জুন দিল্লি সফর করেন। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্য হলেন- দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর। এই প্রতিনিধি দলটি সেমিনারে অংশ নেয়া ছাড়াও ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), বিরোধী দল কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথাবার্তা বলেছেন।