ফেরার ‘অবিশ্বাস্য’ গল্প লিখে জাপানকে হারাল বেলজিয়াম

স্পোর্টস ডেস্ক: অবিশ্বাস্য! অভূতপূর্ব! এমন একগুচ্ছ বিশেষণ দিয়েও কি বোঝানো যাবে বেলজিয়াম—জাপান ম্যাচের মাহাত্ম্য? ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে শেষ ৪৮ বছরে জিততে পারেনি কোনো দলই। কিন্তু সোমবার রস্তোভ অ্যারিনায় অবিশ্বাস্য সেই গল্পটাই লিখলো রাশিয়া বিশ্বকাপের ‘ডার্ক হর্স’ বেলজিয়াম। জাপানকে হারাল তারা ৩-২ গোলে।

সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি নিশ্চিতভাবেই ইতিহাসে ঠাঁই করে নেবে। রাশিয়া বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সেরা ম্যাচের স্বীকৃতি তো পাবে অবশ্যই। যেখানে জাপানি খেলোয়াড়দের দুর্দান্ত লড়াইয়ে থাকলো মুগ্ধতা। প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তাদের ২-০ গোলের লিড নেওয়া। তারপরও রূপকথার কাব্য লিখে যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটের গোলে জয় বেলজিয়ামের।আগামী ৬ জুলাই কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের সঙ্গী হলো দলটি।

একটা ফুটবল ম্যাচের কাছে দর্শকদের যা কিছু চাওয়ার থাকে সবই যেন উজাড় করে দিল রস্তোভ অ্যারিনা। ম্যাচের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে মিশে থাকলো শিহরণ। দুর্দান্ত গতিময় ফুটবল খেলল দুই দলই। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বেলজিয়াম যে তৃতীয় আর জাপানের অবস্থান ৬১তম; এই ব্যবধানও গেল ঘুচে। জাপান বরং সত্যিকারের এক ত্রাস রূপে নিজেদের মেলে ধরল।

দুর্দান্ত সেই জাপানের সামনে ‘ডাক হর্স’ বেলজিয়াম প্রথমার্ধে আটকে গেল। দারুণ দারুণ সব আক্রমণে গিয়েও গোল আদায় করতে পারেনি দলটি। অন্যদিকে জাপানও প্রতিপক্ষের রক্ষণকে কাঁপিয়ে দিল বারবার। বিরতির ঠিক আগে জাপানি ফরোয়ার্ড ইউয়া ওসাকো যে গোল পেলেন না তার জন্য বেলজিয়াম ফুটবল বিধাতাকে ধন্যবাদ দিতেই পারে। গোলরক্ষক থিবো কুর্তোইস তো অবশ্যই।

বিরতির পর মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে ২-০ গোলের লিড নিয়ে নেয় জাপান। তাদের দু’টি গোলই ছিল দেখার মতো। প্রথম গোলটি এলো ৪৮ মিনিটে। গাকু শিবাসাকি প্রায় মধ্যমাঠ থেকে বল বাড়ান গেংকি হারাগুচি। দুর্দান্তভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে বল জালে জড়ান তিনি।

সেই গোলের উৎসব কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় গোল জাপানের। ৫২ মিনিটে তাকাশি ইনুই অবিশ্বাস্য এক গোল করেন। শিনজি কাগওয়া বক্সের একপ্রান্ত থেকে ব্যকপাস করে বল দেন ইনুইকে। যিনি সরাসরি শটে জালে জড়িয়ে দেন বল।

দুই গোল হজমের পর মরিয়া হয়ে পড়ে বেলজিয়াম। ৬১ মিনিটে টমাস মুনিয়েরের ক্রস থেকে লুকাকুর হেড অল্পের জন্য পোস্ট খুঁজে পায়নি। মিনিট দুই পর বেলজিয়ামের রক্ষণকেই আবার কাঁপিয়ে দেয় জাপান।

৬৯ মিনিটে ইয়ান ভারটোঙ্গেন গোল করে ব্যবধান কমান বেলজিয়ামের। মিনিট দুই আগে থেকেই জাপানের রক্ষণে চাপ তৈরি করেছিল বেলজিয়াম। এক পর্যায় কর্নার আদায় করে দলটি। কর্নার কিক ডি-বক্সে জটলায় বল পেয়ে জান ডিফেন্ডার ভারটোঙ্গেন। হেড থেকে বল জালে জড়ান তিনি।

৭৪ মিনিটে ইডেন হ্যাজার্ডের ক্রস থেকে হেড করে গোল করেন রুয়ান ফেলাইনি। তাতে ম্যাচ ফিরে সমতা। বারুদের উত্তেজনায় রূপ নেয় তখন রাশিয়া বিশ্বকাপের ষষ্ঠ কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ।

দুই দলই দুর্দান্ত সব আক্রমণ করতে থাকে। জাপান গোলরক্ষক এইজি কাওয়াশিমা পোস্টের নিচে ছিলেন দুরন্ত। একই রকম রূপে ছিলেন বেলজিয়াম গোলরক্ষক থিবো কুর্তোইসও। দুজনের নৈপুণ্যেই প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকাররা গোল বঞ্চিত হয়েছে বারবার। ৮৫ মিনিটে দুর্দান্ত দু’টি গোলরক্ষা করেন কাওয়াশিমা। দুই মিনিট পরও জাপানের ত্রাতা ছিলেন কাওয়াশিমা।

দুই গোলকিপারের নৈপুণ্যে যখন গোল পাচ্ছিল না কোনো দলই তখন নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষে ৪ মিনিটের ইনজুরি সময়ে গড়ায় খেলায়। সেখানেও দুই দলের দারুণ সব আক্রমণ। ৯৩ মিনিটে হোন্ডার শট রুখে দেন বেলজিয়াম গোলরক্ষক। দারুণভাবে বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে মধ্যমাঠে সতীর্থের উদ্দেশ্যে বল বাড়ান তিনি। যেখানে ছিলেন ডি ব্রুইন। তিনি বল বাড়িয়ে দেন টমাস মুনিয়েরকে। বক্সের ডানপ্রান্ত থেকে বাঁ দিকে নিচু করে ক্রস করেন তিনি। মার্কে থাকা লুকাকু বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বলটি ছেড়ে দেন। তার পেছন দিয়ে বল যায় নাসের জাডলির কাছে। বদলি নামা এই খেলোয়াড় বল জালে জড়িয়ে রূপকথার এক জয় লিখেন।

রূপকথার এই গল্প অবশ্যই বেলজিয়ামের। তবে জাপনের জন্য এই ম্যাচ চির ট্রাজেডি হয়েই থাকবে। বেলজিয়াম জয়সূচক গোল করার পরই জাপানি কোচ আকিরা নিশিনোকে খুঁজে নিল টিভি ক্যামেরা। তার চোখমুখে জুড়ে মিশে থাকল যেন অবিশ্বাস। দুর্দান্ত যে লড়াই তার দল করল তাতে, জয় তো তাদেরও পাওয়ার কথা ছিল। তবে জয় না পেলেও রাশিয়া বিশ্বকাপে সবার মন ঠিকই পেল এশিয়ার দেশটি।