ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামে এক হাজার একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিনিয়োগের পাশাপাশি ভারতীয়রা সেখানে এলএনজি প্রকল্পও স্থাপন করতে পারেন। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা সৌজন্য সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রী একথা জানান। খবর ইনকিলাব।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়া প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ সফররত মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সাবু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে একথা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারতীয় হাইকমিশনারের সাক্ষাত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ভারতের সহযোগিতায় বাংলাদেশে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়েই তারা মূলত আলোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে প্রেস সচিব বলেন, গত ৯ বছরে বাংলাদেশ এবং ভারত বিভিন্ন প্রচলিত এবং অপ্রচলিত খাতে বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিস্ময়কর অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করেছে। সাক্ষাতকালে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার অন্যান্য ক্ষেত্রের মত বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি ক্ষেত্রে ভারতের সাহায্য ও সহযোগিতার জন্য গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জনে ভারত তার সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ভারতীয় হাইকমিশনার এ সময় বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য তার দেশের বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং এর ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে জানান, পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলে এ বিষয়ে নতুন দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামে এক হাজার একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। তারা চাইলে সেখানে এলএনজি প্রকল্পও স্থাপন করতে পারেন। এ সময় হর্ষবর্ধন শ্রীংলা আগামী ১৩ জুলাই ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের তিনদিনের বাংলাদেশ সফর এবং দুই দেশের পুলিশ একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে তার সারদা পুলিশ একাডেমি সফর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী গত মে মাসে তাঁর ভারত সফর এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার বৈঠকের বিষয়টিও স্মরণ করেন। ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শান্তি নিকেতন সফর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি ভালো প্রভাব ফেলেছে।
প্রধানমন্ত্রী একথা জানান। খবর ইনকিলাব।
এদিকে, গতকাল সকালে বাংলাদেশ সফররত মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সাবু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং সফররত মালয়েশীয় মন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেন। তাদের মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যু এবং দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়েও আলোচনা হয়।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের দেশে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে মিয়ারমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তাঁর সরকার একটি দ্বীপের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে যেখানে তাদের স্থানান্তর করা হবে। মালয়েশীয় মন্ত্রী বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, তার দেশ এসব রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় মাহাথির মোহাম্মদের প্রতি শুভেচ্ছা জানান এবং তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন। এছাড়া তিনি মালয়েশীয় সংসদে নির্বাচিত হয়ে মাহাথির মোহাম্মদের মন্ত্রী সভার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করায় মোহাম্মদ বিন সাবুকেও শুভেচ্ছা জানান।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং মালয়েশীয় মন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরো ঘনিষ্ঠ হবার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বৃহত্তর মুসলিম ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ভাতৃঘাতি সংঘাত খুব দুর্ভাগ্যজনক। শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সম্পদশালী দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের উন্নয়নের গতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। এ সময় তিনি ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তাঁর মালয়েশিয়া সফরের কথাও স্মরণ করেন।
মোহাম্মদ বিন সাবু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।