আ’লীগ নেতা ফরহাদ যেভাবে খুন হন

ডেস্ক রিপোর্ট : কাঁচাবাজার ও ডিশ ব্যবসায় চাঁদাবাজির টাকার ভাগ-বাটোয়ারার জেরেই হত্যার শিকার হন বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ হোসেন। সন্ত্রাসী রমজান ওই এলাকায় চাঁদাবাজি করতেন। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ান ফরহাদ। ক্ষোভ মেটাতে ফরহাদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শীর্ষ সন্ত্রাসী রমজান, মেহেদী ওরফে কলিন্স ও আশিক।

শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন এসব তথ্য জানান।

এর আগে শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশান ও শাহআলী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফরহাদ হত্যায় জড়িত ৫ ভাড়াটে খুনিকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ৪টি ম্যাগাজিনসহ ১২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ফরহাদকে হত্যার কয়েক দিন আগেই ভারতে চলে যান রমজান। কিলিং মিশন সফল করার দায়িত্ব দিয়ে যান আপন ছোট ভাই সুজন ও তার সহযোগীদের। হত্যাকাণ্ডের অপর পরিকল্পনাকারী সন্ত্রাসী আশিক ভারতে এবং মেহেদী আমেরিকায় রয়েছেন। সেখান থেকেই তারা কিলিং মিশন সফল করতে যাবতীয় নির্দেশনা দেন।

যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী মিশনে অংশ নেন মেহেদীর বাংলাদেশে থাকা সামরিক কমান্ডার অমিত, ভাড়াটে শুটার নুর ইসলাম, অনির, সৌরভ ও সাদ।

গ্রেফতারকৃরা হলেন- জাকির হোসেন, আরিফ মিয়া, আবুল কালাম আজাদ ওরফে অনির, বদরুল হুদা ওরফে সৌরভ ও বিল্লাল হোসেন ওরফে রনি।

যেভাবে খুন হন আ’লীগ নেতা ফরহাদ

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ জুন শুক্রবার সকালের দিকেই উত্তর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে একত্র হয় অমিত, নুর ইসলাম, অনির, সৌরভ ও সাদ। অমিতের নির্দেশনা অনুযায়ী নুর ইসলাম, অনির ও সৌরভ মূল কিলিং মিশনে অংশ নেয়। ব্যাকআপ হিসেবে সাদকে নিয়ে আলাদাভাবে অবস্থান নেয় অমিত।

দুপুর ১২টার দিকে রমজানের ছোট ভাই সুজন কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী তিনজন শুটার ও ব্যাকআপ সাদকে জাকিরের সঙ্গে অস্ত্রবহনের জন্য একটা রিকশা গ্যারেজে পাঠান। চারজনকেই অস্ত্র বুঝিয়ে দেয় শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর অন্যতম আস্থাভাজন পুলক ওরফে পলক।

এরপর জাকির তাদের নিয়ে আরিফের কাছে পৌঁছে দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী আরিফ শুটারদের মসজিদের কাছে নিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে টার্গেট ফরহাদকে চিনিয়ে দেয়। নামাজ শেষে ফরহাদ মসজিদ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ই নুর পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে ফরহাদকে গুলি করে পালিয়ে যান।

পালানোর সময় সন্ত্রাসীরা পুলিশ চেকপোস্ট লক্ষ্য করে গুলি করে। পরে শুটাররা তাদের অস্ত্রগুলো শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিতের কাছে বুঝিয়ে দিতে পল্লবী এলাকায় যান। সেখানে অমিত ও রমজানের ভাই সুজন অস্ত্রগুলো গ্রহণ করে এবং শুটারদের মধ্যে ১ লাখ টাকা ভাগ করে দেন। হত্যাকাণ্ডের পরপরই দেশ ত্যাগ করে রমজানের ভাই সুজনও।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, গত ৪ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ফরহাদ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম শুটার নুর ইসলাম ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিত। আর শুক্রবার ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের শনিবার আদালতে পাঠিয়ে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে। বিদেশে বসেই ব্যবসায়ীদের হুমকি

বিদেশে বসেই শীর্ষ সন্ত্রাসী রমজান, মেহেদী ওরফে কলিন্স ও আশিক রিয়েল এস্টেটসহ বিভিন্ন বড় ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করছেন বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল বাতেন। তিনি বলেন, ‘এই গ্রুপটা বিদেশে বসেই তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দেশের ভেতরে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে। বিদেশে থাকায় তাদের গ্রেফতার করা কঠিন হলেও, ওই নেটওয়ার্কের যারা দেশে রয়েছেন আমরা তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।’

এ সময় আবদুল বাতেন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানিয়েছেন— তারা আরও এক ব্যবসায়ীকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই ব্যবসায়ীর নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। তার নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুন দুপুরে রাজধানীর উত্তর বাড্ডার আলীর মোড় এলাকার পূর্বাঞ্চল ১ নম্বর লেনসংলগ্ন বায়তুস সালাম জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে বের হলে বাড্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।