স্পোর্টস ডেস্ক : খেলোয়াড় ও কোচ দুই ভূমিকায় বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্ব বিশ্বে মাত্র দুই ব্যক্তিরই আছে। ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশাম সেই বিরল কৃতিত্ব অর্জনের দ্বারপ্রান্তে। রোববার ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে জিতলেই তিনি হবেন খেলোয়াড় ও কোচ দুই ভূমিকায় বিশ্বকাপ জয়ী তৃতীয় ব্যক্তি।
‘ভাগ্যবান’ হিসেবে ফ্রান্সে বিশেষ সুনাম আছে দিদিয়ের দেশামের। ফরাসি গণমাধ্যমে দেশমকে নিয়ে যেসব কার্টুন আঁকা হয়, সেসবের একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলো প্রায়ই তার পাশে নীল রঙা বিড়াল থাকে। নীল রঙা বিড়ালকে সৌভাগ্যের প্রতীক ভাবা হয়।
১৯৯৮ সালে যেবার ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতলো সেবার অধিনায়ক ছিলেন দেশাম। তবে রোববারের ফাইনালের আগে দেশাম যা বললেন, তা দার্শনিকের মুখেই মানায়। বললেন, ‘আমি সম্ভবত প্রায়ই সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকি। ফলে আমার অভিযোগ করার কিছু নেই। আমার চেয়ে ভালো অবশ্যই কেউ না কেউ আছে। আবার খারাপও আছে।’
এই বিশ্বকাপের ড্র শেষে ফ্রান্সের গ্রুপ দেখে অনেকেই বলেছিলেন দলটার ভাগ্য ভালো। কারণ, ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ ছিল ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া ও পেরুর মতো মাঝারি সারির দল। কোয়ার্টার ফাইনালেও ছিল ভাগ্যদেবীর আশীর্বাদ। উরুগুয়ের সঙ্গে ফ্রান্সের ওই ম্যাচে ছিলেন না উরুগুয়ের দুর্দান্ত ফর্মে থাকা স্ট্রাইকার এডিনসন কাভানি, যিনি আগের ম্যাচেও দুই গোল করেছিলেন।
ফ্রান্সের খেলোয়াড়রাও সৌভাগ্যের কথা মানছেন। মিডফিল্ডার পল পগবা বলেন, ‘সৌভাগ্য খুব কম কোচেরই থাকে। তিনি ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন। তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ খেলোয়াড়, কাপ্তান ও নেতা।’
তবে খেলোয়াড়ি জীবনে গ্ল্যামারের জন্য বিশেষ পরিচিতি ছিল না দেশামের। তার সতীর্থ এরিক কান্টোনা একবার মজা করে বলেছিলেন, দেশাম হলো দলের পানির বোতল বোহনকারী! কোচ হিসেবেও তার খেলার স্টাইল নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। অ্যান্তোইন গ্রিজম্যান ও কিলিয়ান এমবাপের মতো প্রতিভাধর খেলোয়াড়ের কারণে ফ্রান্সের আক্রমণভাগ ভীষণ শক্তিশালী। কিন্তু একে পুরোপুরি ব্যবহার করতে না পারার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
শেষ অবধি ফ্রান্স যদি দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে যায়, তাহলে হয়তো দেশামের কোচিংয়ের ধরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না কেউই। ফরওয়ার্ড গ্রিজম্যান বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, রোববার ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ফ্রান্সের জয় পাওয়াটা, জয়ের পন্থার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘আমি অন্য কিছু পাত্তা দিই না। আমি চাই আমার জার্সিতে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তারকা চিহ্ন আসুক। আমি যদি সেই তারকা অর্জন করতে পারি, আমি এটা নিয়ে ভাববো না যে আমরা কীভাবে খেললাম।’
এ নিয়ে টানা দুইবার দেশামের অধীনে বড় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে গেল ফ্রান্স। ২০১৬ সালের ইউরোতে অবশ্য পর্তুগালের কাছে ফাইনালে তিক্ত পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। ফলে এবার দেশামের সামনে সুযোগ আগের অর্জনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।
রোববারের ম্যাচে নিশ্চিতভাবেই ফ্রান্স ফেভারিট। ফরাসি কোচের সামনে এখন ব্রাজিলের মারিও জাগালো ও জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের পাশে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লেখাতে আর এক ধাপ বাকি।