কাতার বিশ্বকাপের ডামাডোল মস্কোতেই

স্পোর্টস ডেস্ক: অতীত হতে যাওয়া রাশিয়া বিশ্বকাপ নিয়ে ক’দিন হয়তো আলোচনা হবে। চলবে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কে চ্যাম্পিয়ন হলো এরচেয়ে আলোচনা বেশি হবে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি ও স্পেনের বিদায় নিয়ে। রাশিয়া বিশ্বকাপের ঘোর কাটতে না কাটতেই শুরু হয়ে যাবে পরের বিশ্বকাপ নিয়ে আলোচনা। একটি করে দিন যাবে, সামনে এগিয়ে আসবে কাতার বিশ্বকাপ। ঘণ্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস ও বছর করে করে চলে আসবে ২০২২ সাল।

fifa world cup qatar 2022দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়ায় বসবে বিশ্বকাপ ফুটবল আসর। এর ধারণা দিতেই ফাইনালের এক সপ্তাহ আগে রাশিয়ার প্রধান দুই শহর মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে শো-ডাউনের আয়োজন করেছিলো কাতার। যার সমাপ্তি ঘটেছে গতকাল মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ফাইনালের মধ্যদিয়ে। স্টেডিয়ামের বাইরে বিশাল এক প্যাভিলিয়ন তৈরি করেই সেখানে কাতারের ইতিহাস ঐতিহ্য, দর্শনীয় স্থান, হোটেল, স্টেডিয়াম, বিনোদনকেন্দ্রসহ নানা বিষয় দর্শকদের দেখিয়েছেন তারা।

প্রতিটি ম্যাচের আগেই দর্শকদের জন্য নানা আয়োজন থাকে স্টেডিয়ামে। বিভো মোবাইল, কিয়া গাড়ির প্যাভিলিয়ন তো নাচে গানে মাতিয়ে রাখেন রুশ সুন্দীরা। ফাইনালের আগে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কাতারের প্যাভিলিয়ন। কাতারের প্যাভিলিয়ন ছিলো দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে। লাইনে দাঁড়িয়ে কাতার বিশ্বকাপের প্যাভিলিয়নে ঢুকতে দেখা গেছে তাদের। আয়োজক কাতার ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তা খালিফা কাসিম আল তাওয়াদি জানান, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে কাতার সম্পর্কে এখানকার মানুষকে একটা ধারণা দেয়া। বিশ্বকাপ আয়োজন আমরা করছি তাও দেখানো ইচ্ছা ছিলো আমাদের। পাশাপাশি আমরা সেখানে দর্শকদের কি কি সুযোগ-সুবিধা দিবো, কাতার ঐহিত্য, ইতিহাস তুলে ধরেছি এই আয়োজনের মধ্যে দিয়ে।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে এতদিন যা করা হয়নি, এবার কাতার বিশ্বকাপকে ঘিরে সেটাই করতে যাচ্ছে ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফা। ১৯৩০ সাল থেকে শুরু হওয়া বিশ্বকাপের প্রায় ৮৮ বছর পার হতে চললো। ২০২২ বিশ্বকাপে ৮৮ বছরের নিয়ম পরিবর্তন করে দিচ্ছে ফিফা এবং আয়োজক দেশ কাতার। সর্বশেষ ফিফা কংগ্রেসে নেয়া সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাতার বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে নভেম্বর -ডিসেম্বরে। একমাসের কম সময়ের ব্যাপ্তির এই টুর্নামেন্টে ২১শে নভেম্বর শুরু, শেষ হবে ১৮ ডিসেম্বর। ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে কাতার যখন নির্বাচিত হয়েছিল, তখন থেকেই সমালোচকদের তীর ছুটে আসতে থাকে ফিফার এই সিদ্ধান্তের দিকে। ফিফার সাবেক প্রেসিডেন্ট সেফ ব্লাটার অনড় ছিলেন তার সিদ্ধান্তে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোও একইভাবে অনড় অবস্থানে। সমালোচকদের সমালোচনার সবচেয়ে বড় ইস্যু ছিল, জুন-জুলাইয়ে কাতারের উত্তপ্ত আবহাওয়া। খই ফোটানো আবহাওয়ার মধ্যে আর যাই হোক, অন্তত ফুটবল খেলা যায় না। আবহাওয়া নিয়ে তুমুল সমালোচনার শিকার কাতার বিশ্বকাপ আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

যদিও, কাতারের শেখরা বার বার বলে আসছিলেন, চাইলে তারা পুরো স্টেডিয়ামকেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করে দেবে। স্টেডিয়াম না হয়, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা গেল; কিন্তু স্টেডিয়ামের বাইরে তো আর পুরো কাতারকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা যাবে না! সুতরাং, তীব্র গরমের মধ্যে কীভাবে বিশ্বকাপের আয়োজন করা হবে? এ নিয়ে চলা তুমুল বিতর্কের মধ্যে অনেক আগে থেকেই কথা হচ্ছিল, টুর্নামেন্টের সময় পরিবর্তন করা যায় কি না- সে ব্যাপারে। জুন-জুলাইয়ের পরিবর্তে টুর্নামেন্ট নভেম্বর-ডিসেম্বরে নিয়ে যাওয়া যায় কি না- সে সম্ভাবনা নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে আলাপ-আলোচনা চলছিল। শেষ পর্যন্ত ফিফা সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেললো, নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ আয়োজন করার। ফিফার এই সিদ্ধান্তের ফলে ওলট-পালট হয়ে যাবে ক্লাব পর্যায়ের লীগ এবং টুর্নামেন্টগুলোর সূচি। এখন নতুন করে ক্লাবগুলোকে ২০২২-২৩ মৌসুমের সূচি নির্ধারণ করতে হবে। ২০২২ বিশ্বকাপেও পরিবর্তন হতে পারে ফরম্যাট। ৪৮ দলের সম্ভাবনা রয়েছে কাতার বিশ্বকাপ থেকেও। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কাতারি আয়োজক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ফিফা।

কাতারও প্রস্তুতি নিচ্ছে সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপের স্বীকৃতি পাওয়া রাশিয়া বিশ্বকাপকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। চার বছরের বেশি সময় পেয়েছে কাতারিরা। তারা কি পারবে এই সময়ের মধ্যে আদর্শ আয়োজক হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে? পারবে কি সকল সমালোচনার জবাব দিয়ে জমজমাট বিশ্বকাপ উপহার দিতে?