চৌগাছার পাঁচজনের বিরুদ্ধে ‘ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা’র অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর : জেলার চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শাহাজান কবির, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরীরর বাবা আবুল কাশেম চৌধুরী ও চাচা আবুল কালাম চৌধুরীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ‘ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা’ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

গত ৪ জুলাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযুক্তরা বাকী দুইজন হলেন-চৌগাছার ফুলসারা গ্রামের জাহাতাব মুন্সীর ছেলে হাইদার ও মু্িক্তনগর গ্রামের নূর আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম।।

চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার ও মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের অভিযোগের ভিত্তিতে ৬ জুলাই প্রথম দফায় শুনানি হয়। এরপর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক (ডিজি) আগামী ১৯ জুলাই পরবর্তী শুনানীর জন্য দিন নির্ধারণ করেছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, শাহাজান কবীর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ বা প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে যাননি। মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস তিনি উপজেলার মির্জাপুর, কান্দি গ্রামে ও মর্জাদ বাওড়ের পার্শ্বে বিভিন্ন গ্রামে পালিয়ে থাকতেন। এ যাবৎ তিনি কোন যাচাই-বাছাই বোর্ডে উপস্থিত হতে সাহস পাননি। তার নিকটাত্মীয় সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু জাফরের সহযোগিতায় তিনি লাল মুক্তিবার্তায় নাম অন্তর্ভূক্ত করেছেন। আবুল কালাম চৌধুরী ও আবুল কাশেম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময় যুদ্ধের নয় মাস তিনি স্ত্রী, পুত্র, মেয়ে নিয়ে দুর্গম এলকা জগহাটি বাওড় এলাকার পাশে সাজিয়ালি ও তীরেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে থেকেছেন। বিভিন্ন সময় যাচাই-বাছাই বোর্ডে উপস্থিত হতে সাহস পাননি। সর্বশেষ তিনি সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (ভুয়া যুদ্ধাহত প্রমাণিত হওয়ায় যুদ্ধাহত ভাতা বন্ধ হওয়া) এলাকায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরির কারিগর শওকত আলী ও সাবেক কমান্ডার ডা. নূর হোসেনের সহায়তায় বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন।

হাইদার আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি নিজে এখনো বলেন আমি মুক্তিযোদ্ধা নই। সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু জাফর আমার গ্রামের লোক তিনি আমাকে মুক্তিযোদ্ধা তৈরি করেছেন। তিনি কখনও মুক্তিযোদ্ধা হবার জন্য আবেদনও করেন নি। তিনি ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় মুজাহিদ ছিলেন। তিনি কখনও ভারতে যাননি। দেশের মাটিতেও তার কোন ভুমিকা ছিলনা। আর নজরুল ইসলাম সরকারি চাকরি করার সময়ে প্রভাব খাটিয়ে অর্থের বিনিময়ে লাল মুক্তিবার্তায় নাম অন্তর্ভূক্ত করেছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য কখনও ভারতে যাননি বা দেশের অভ্যন্তরে কোন ভূমিকা রাখেন নি। তার কোন সহযোদ্ধাও নেই।

অভিযোগকারী চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তার বলেন, সরকার ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সুযোগ দিয়েছে। এজন্য তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগ করেছি। এক দফা শুনানি হয়েছে। পরবর্তী সুনামী ১৯ জুলাই। তারা ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা এতে সন্দেহ নেই।

জানতে চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শাহজাহান কবির বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগে গ্রুপিং আছে, সামনে নির্বাচন। এজন্য আমার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের লোকজন অভিযোগ করেছে। প্রথম থেকেই আমার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আছে। লালবার্তা, মুক্তিবার্তা সবখানে আমার নাম আছে।

উল্লেখ চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগে দুটি গ্রুপ বিদ্যমান। অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শাহাজাহান কবীর ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী সংসদ সদস্য অ্যাড. মনিরুল ইসলামের অনুসারী। অপরদিকে অভিযোগকারী সাবেক সহ-সভাপতি আবদুস সাত্তার চৌগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হাবিবুর রহমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।