রাঙামাটিতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রীতিময়কে অপহরণ!

protimoi chakmaরাঙামাটি: রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রীতিময় চাকমাকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। আজ শুক্রবার দুপুরে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এ অভিযোগ করা হয়।

অপহৃত প্রীতিময় চাকমা ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী প্রণতি রঞ্জন খীসার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। তবে বিবৃতিতে এই পরিচয়টি এড়িয়ে গেছে ইউপিডিএফ। প্রীতিময় চাকমা ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

বিবৃতিতে সংগঠনটির রাঙামাটি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক শান্তিদেব চাকমা অভিযোগ করেন, “বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নব্য মুখোশ বাহিনী (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) ও জেএসএস সংস্কারবাদীর (জনসংহতি সমিতি-এম এন লারমা) সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা নানিয়ারচর উপজেলার ১ নম্বর সাবেক্ষ্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়ার নিজ বাড়ি থেকে সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রীতিময় চাকমাকে অপহরণ করে। পরে তাঁকে ইঞ্জিনচালিত বোটে করে ‘সন্ত্রাসী আস্তানা’ মহালছড়ি উপজেলার মুবাছড়ির দিকে নিয়ে যায়।”

তবে অপহরণ ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)।

বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে সাবেক নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রীতিময় চাকমাকে উদ্ধারে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ইউপিডিএফের নেতা শান্তিদেব চাকমা।

বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি সৃষ্টির জন্য ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও জনসংহতি সমিতিকে (এম এন লারমা) দায়ী করে শান্তিদেব চাকমা বলেন, ‘গত বছর ১৫ নভেম্বর নব্য মুখোশ বাহিনী (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) নামে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জন্ম হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও চাঁদাবাজির ঘটনা অবিরামভাবে ঘটে চলেছে।’

অপহরণের ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা) সহতথ্য ও প্রচার সম্পাদক প্রশান্ত চাকমা বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা তাদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও হতে পারে।’

ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) দপ্তর সম্পাদক মিটন চাকমা বলেন, ‘নানিয়ারচরে অপহরণের কোনো খবর আমরা পাইনি। আর ইউপিডিএফ যেহেতু সবকিছুতে আমাদের দায়ী করে, সেখানে আর কী বলার আছে। হয়তো বা তারা ঘটনাটি ঘটিয়ে আমাদের দোষারোপ করছে।’

নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ জানান, এ ধরনের কোনো খবর তাঁরা পাননি। এখন পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো অভিযোগও করেননি।

গত ৩ মে নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের সামনে প্রকাশ্যে পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সহসভাপতি শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১৩ জুলাই খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা নিহতের পর থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন চঞ্চুমনি চাকমা।

এদিকে ২৫ জুলাই নানিয়ারচর উপজেলায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যাতে অংশ নিচ্ছেন নিহত উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমার দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা) সমর্থিত প্রার্থী প্রগতি চাকমা এবং যাদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সেই ইউপিডিএফের সমর্থিত প্রার্থী প্রণতি রঞ্জন খীসা।

এ ছাড়া কল্পনা চাকমা নামের এক নারীও এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যদিও প্রচারণায় তাঁকে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। এই নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে ওই এলাকায় নানা ধরনের শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে।