৩১ বছরে কর্মস্থল থেকে একদিনও ছুটি নেননি যশোরের শিক্ষক সত্যজিৎ মন্ডল

স্টাফ রিপোর্টার: ৩১ বছর চাকরি জীবনে একদিনও ছুঠি নেননি। কর্মস্থলে আসতে দেরীও করেননি কখনও। বাবার মৃত্যু, নিজের বিয়ে এমনকি প্রচন্ড অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল বেড থেকে উঠে এসেও স্কুল করেছেন।

teacher syttojit mondolকর্তব্যপরায়ণতার এমন উদাহরণ তৈরি করেছেন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ধোপাদি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সত্যজিৎ মন্ডল। এতো কর্তব্যপরায়ণতার কোন স্বীকৃত না পেলেও; তিনি পরিচিত পেয়েছেন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে।

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার কুচলিয়া গ্রামে বেড়ে উঠা সত্যজিৎ মন্ডলের। ১৯৮৬ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। চাকরি জীবনের প্রথম দিন থেকেই স্কুল শুরুর আগেই তিনি পৌঁছে যেতেন। দীর্ঘ ৩১ বছরের চাকরি জীবনে তার এ সুঅভ্যাসের ব্যতিক্রম ঘটেনি।

syttojit mondolশুধু তাই নয়, প্রায় ৩ যুগের চাকরি জীবনে একদিনও স্কুল কামাই করেননি, নেননি ছুটিও। এমনকি নিজের বিয়ের দিন, বাবার মত্যুর দিনেও স্কুলে উপস্থিত থেকেছেন তিনি। এজন্য নিজের পরিবারের লোকজনসহ অনেকেই তাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবুও অটল থেকেছেন সত্যজিৎ। বিবেকের শতভাগ প্রদীপ জ্বেলে শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো জ্বেলে চলেছেন তিনি।

শিক্ষক সত্যজিৎ মন্ডল বলেন, আমির এই স্কুলে নিয়োগ বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে। তখন এখানে আর কোন বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিল না। তাই বিজ্ঞানের ক্লাসগুলো কোন শিক্ষক নিতে পারতেন না। সেকারণে আমি ছুটি নিলে বা উপস্থিত না থাকলে শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। এসব কথা ভেবেই আমি স্কুলে উপস্থিত থেকেছি।

তিনি বলেন, তখনকার সময় কাঁদা ও বুক পানি মাড়িয়ে ৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে এসেছি। কখনও লুঙ্গি পরে, জুতা হাতে নিয়ে আসতে হয়েছে। স্কুলে এসে তা পরিবর্তন করে ক্লাস করেছি। বলতে বলতে চোখ ভারি হয়ে যায় সত্যজিৎ মন্ডলের। হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে আমার আত্মার সম্পার্ক হয়ে গেছে। তাদের না দেখলে আমি থাকতে পারি না।

সংসার জীবনেও একজন সুখী ও আদর্শ মানুষ গণিতের শিক্ষক দুই সন্তানের জনক সত্যজিৎ মন্ডল। তার প্রতশ্যা; এই স্কুলটিকে তিনি অভয়নগর উপজেলার শ্রেষ্ঠ করা। তার জন্য সবার সহযোগিতা চান তিনি।

কাজের প্রতি এমন বিরল নিষ্ঠার কারণে পরিবার, সহকর্মী আর শিক্ষার্থীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় এই শিক্ষক।

গণিতের শিক্ষক সত্যজিৎ মন্ডলের কর্তব্যনিষ্ঠায় মুগ্ধ যশোর অভয়নগর উপজেলার ধোপাদি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সত্যজিৎ মন্ডল শুধু শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করান না। তাদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

যশোর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম টুকু বলেন, নি:সন্দেহ কর্মস্থালে এতো বছর ছুটি না নেওয়া অনুস্বরণীয়। পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। কারণ ব্যক্তি জীবনে অনেক সমস্যা থাকতে পারে। তার মধ্যেও তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকেছেন। আসলে আর্দশ শিক্ষক বলতে আমরা যাদের অনুস্বরণ করতে পারি সত্যজিৎ মন্ডল তার মধ্যে একজন।
সত্যজিত মন্ডলের এমন দায়িত্ববোধের স্বীকৃতি দেবে সরকার; আশা স্কুলটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।