নির্বাচন থেকে সরবো না, প্রয়োজনে শাহাদাত বরণ করবো : আরিফ

arifulডেস্ক রিপোর্ট: সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপিদলীয় মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনে যদি অনিয়ম হয়, ফলাফল পাল্টে দেয়া হয়, তবে রাজপথ ছাড়বেন না, প্রয়োজনে শাহাদাত বরণ করবেন তিনি শুক্রবার রাত ১০টায় নগরীর কাজীটুলাস্থ একটি কমিউনিটি সেন্টারে নিজের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, “আওয়ামী লীগ চায় আমরা নির্বাচন থেকে সরে যাই। কিন্তু যতো চেষ্টাই করুক, আমরা নির্বাচন থেকে সরবো না। যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের বলতে চাই, আমরা ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো। ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মারার শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এবার নির্বাচনের সঙ্গে আন্দোলন। নির্বাচনে অনিয়ম হলে ফলাফলের পর কেউ রাজপথ ছাড়বো না। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। প্রয়োজনে শাহাদাত বরণ করবো।”

আরিফ অভিযোগ করে বলেন, “ঢাকা থেকে সরকারের কর্মকর্তারা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করতে সিলেটে এসেছেন। সিলেটে বেরাচেরা (উল্টাপাল্টা) করে লাভ নাই। ভয় দেখিয়ে লাভ নাই। সিলেটের মানুষ এসব পছন্দ করে না। অধিকার কেড়ে নিলে সিলেটের মানুষ জেগে ওঠবে।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা আরিফ তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে আমার নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব থাকা সকল পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, গ্রেফতার, বাসাবাড়িতে তল্লাশির মাত্রা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সমর্থক নামধারী সন্ত্রাসী ও প্রশাসনের কিছু সংখ্যক সদস্যদের যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে আমার নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত থাকা দলীয় নেতাকর্মীদের ফাঁসাতে ককটেল হামলা, কার্যালয় পুড়ানোসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের অবাধে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে আমি শঙ্কিত।”

তিনি আরও বলেন, “ভোটের দিন আমার পুলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা, গ্রেফতার, গুম করে কেন্দ্র দখল করে ফলাফল সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে নেয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে আশঙ্কা করছি। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যেই বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, বাসাবাড়িতে তল্লাশি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।”

আরিফুল হক চৌধুরী আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী কামরানের কর্মীবাহিনী দিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে টুলটিকরে নিজের নির্বাচনী অফিস পুড়িয়ে মিথ্যা ও কাল্পনিক নাটক সাজিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। বিএনপির দুই কর্মীর খোঁজ করতে গিয়ে শাহজালাল উপশহরে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালিত হলেও পরদিন বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উপর মিথ্যা মামলা দেয়া হলো। একইভাবে দক্ষিণ সুরমায় পুলিশের উপর ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিএনপির ৪৮ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করে একটি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।”

বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে আরিফ উল্লেখ করেন, “সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর চৌকিদেখীতে নিজের (কামরান) কার্যালয়ে নিজেদের বাহিনী দিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। গত ১১ জুলাই হাসান মার্কেট এলাকায় আমার নির্বাচনী পোস্টার সাঁটাতে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার তিন কর্মীকে আটকে রেখে মারধর ও একজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। খবর পেয়ে আমার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দদের নিয়ে আমি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অবস্থান করি। জানি না, আর কতো নাটকীয় ঘটনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমি শঙ্কিত।”

আরিফ প্রশ্ন তুলেন, “ধারাবাহিকভাবে শান্ত নগরীকে অশান্ত করা কিসের আলামত? নগরবাসী তা ভালো করেই জানেন। ককটেল, আগুন সন্ত্রাস, প্রশাসনের একপেশে আচরণ বন্ধ না হলে নগরবাসীকে সাথে নিয়ে সমুচিত জবাব দেয়া হবে।” সকল ‘ভয়ভীতি’ উপেক্ষা করে আগামী ৩০ জুলাই ভোটকেন্দ্রে যেতে নগরবাসীর প্রতি আহবান জানান আরিফ।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এম এ হক, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী, সাবেক এমপি আবুল কাহের চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেকসহ বিশদলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।