অর্ধেকের বেশি কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট

Votডেস্ক রিপোর্ট: রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৩৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬৯টি কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট পড়েছে। রিটার্নিং অফিসার ঘোষিত কেন্দ্রভিত্তিক ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৬৭টি কেন্দ্রে মেয়রপদে ৮০ শতাংশের উপর ভোট পড়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশের ওপর ভোট পড়েছে ১১টি কেন্দ্রে। সর্বোচ্চ ৯৭ দশমিক ২০ শতাংশ ভোট পড়েছে নগরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর দুটি কেন্দ্রে ৫০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছে।

রাজশাহী স্যাটেলাইট টাউন হাই স্কুল কেন্দ্রে সর্বনিম্ন ৪২ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট পড়ে।

ভোটের এ হারকে অস্বাভাবিক বলছেন বিশ্লেষকরা। এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভোটের এ হার অবশ্যই অস্বাভাবিক। নির্বাচন কেমন হয়েছে সেটা সবাই দেখেছে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে কোন পদ্ধতিতে ভোট হয়েছে এটা যাচাই করা। সুষ্ঠু পদ্ধতিতে ভোট না হলে নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য হচ্ছে সেটা বাতিল করা। নির্বাচন কমিশন যদি কিছু না দেখে, কিছু না করে তাহলে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াটা ভেঙে পড়বে।

গত সোমবার সিলেট ও বরিশালের সঙ্গে রাজশাহী সিটিতেও ভোটগ্রহণ হয়। ভোটের শুরুতেই পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ও সদ্যবিদায়ী মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এরপর দুপুরের আগেই বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে মেয়রের ব্যালট শেষ হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন তিনি। প্রতিবাদ হিসেবে নগরীর ইসলামিয়া কলেজ কেন্দ্রের মাঠে অবস্থান নেন বুলবুল। শেষ পর্যন্ত নিজের ভোটটিও দেননি তিনি। ভোটের চূড়ান্ত ফলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন পেয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৬ এবং বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পেয়েছেন ৭৭ হাজার ৭০০ ভোট। বাতিল ভোট ৩ হাজার ৬৯১ এবং ভোটের হার ৭৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের নির্বাচনে বুলবুল ৪৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছিলেন আগের বারের মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা লিটনকে। ওই সময় ভোটের হার ছিল ৭৬ দশমিক ০৯ শতাংশ। ৫৯ বছর বয়সী লিটন এ নিয়ে তিনবার রাজশাহীর মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন। তিনবারই তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন বুলবুল। ২০০৮ সালে যুবদলের তখনকার রাজশাহী মহানগর সভাপতি বুলবুলকে ১৩ হাজার ৮১০ ভোটে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন লিটন। সেবার লিটন হারেন ৪৭ হাজার ভোটে। ভোটের হার ছিল ৮১ দশমিক ৬১ শতাংশ।

৫০ শতাংশের নিচে ভোট: হাউজিং এস্টেট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (৪৭.৭৩) এবং রাজশাহী স্যাটেলাইট টাউন হাই স্কুল (৪২.৬৬)।
৯০ শতাংশের উপর ভোট: কাশিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৯১.৬৯), গোলজারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৯০.৪৬), ঠাকুরমারা কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৯১.১৭), গোলজারবাগ উচ্চ বিদ্যালয় (৯৬.৭৭), নগরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৯৭.২০), রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (৯১.৩১), আলী নেওয়াজের অটো গ্যারেজ মাঠ (৯১.১৯), ছোট বনগ্রাম মাধ্যমিক আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় (দক্ষিণ: ৯০.৭০), শাহ মখদুম ডিগ্রি কলেজ (৯১.১১), ভদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৯২.৭১), সায়েরা খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৯১.৫৮)।

৮০ শতাংশের উপরে ভোট: রায়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৪.৬), মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৫.২৭), রাজশাহী কোর্ট কলেজ (৮১.৪৪), ডিবি আনোয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮২.১৮), মীর আইয়ুব আলী বিদ্যানিকেতন (৮৯.৫৬), রাজশাহী কোর্ট একাডেমি (৮১.৩৬), রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (৮১.৪৮), উদয়ন ডেন্টাল কলেজ (৮১.৩০), বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (৮৩.৩৮), সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (৮৩.০৪), হোসেনিগঞ্জ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৭.৫০), দরগাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৯.১৭), পাঠানপাড়া কামারুজ্জামান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৫.৭৯), রাজশাহী মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় (পুরুষ: ৮৬.১৫, মহিলা: ৮৫.৮৭), রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ (৮৯.৩৮), রাজশাহী বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (৮৭.৪৫), কাদিরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮০.৭৫), মুন্নুজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৫.০৪), শহীদ নাজমুল হক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (৮২.৫৭), তার যোগাযোগ প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮০.২১), আটকোষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৫.১৮), রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয় (৮০.৪৬), শাহ মাখদুম হাই স্কুল (পাকা ভবন: ৮০.১৩, টিনশেড: ৮২.৩৪), নওদাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পূর্ব ভবন: ৮৫.৯২, উত্তর ভবন: ৮৪.৯২), হামিদপুর নওদাপাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (৮৪.৪৫), ইউসেপ ছোট বনগ্রাম সিটি করপোরেশন স্কুল (৮০.৯১), গোল্ডেন টাচ প্রিক্যাডেট স্কুল (৮৮.০১), শিরইল কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরুষ: ৮৭.৬১, মহিলা: ৮৬.৯৬), ছোট বনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পশ্চিম: ৮৭.৩০), ছোট বনগ্রাম মাধ্যমিক আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় (উত্তর: ৮৩.৪৩), শিরইল কলোনি উচ্চ বিদ্যালয় (পশ্চিম: ৮৭.৩৫), কৃষ্ণকান্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮০.৪৭), রানীবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (৮০.১৬), সাবিত্রি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (মহিলা: ৮৬.২৫, পুরুষ: ৮২.৯২), সইজুদ্দিন জনকল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৮.১২), অনন্যা শিশু শিক্ষালয় (৮৮.৮৬), খাদেমুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরুষ: ৮৪.৪২, মহিলা: ৮১.৫৭), মেহেরচণ্ডী উচ্চ বিদ্যালয় (৮৮.৭৯), মাদারবকস গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ (৮১.৯১), বালিয়াপুকুর বিদ্যানিকেতন (পুরুষ: ৮০৬৭), কাজলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরুষ: ৮১.৪১, মহিলা: ৮০.৩৫), তালাইমারী দারুল উলুম আলিম মাদরাসা (পুরুষ: ৮৯.৭৫, মহিলা: ৮০.৩৯), ধরমপুর শমসের আলী মোল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৯.৯৯), ডাঁশমারী উচ্চ বিদ্যালয় (৮২.৭১), রাজশাহী দারুস সুন্নাহ দাখিল মাদরাসা (৮৯.১৮), বিসিএসআইআর ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয় (৮৬.৮৬), ইসলামিয়া কলেজ (৮৫.৪২), মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৫.৯৪)।

উল্লেখ্য, রাজশাহীতে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। ১৩৮টি কেন্দ্রে ১০২৬টি ভোটকক্ষে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন এবং নারী ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন। একজন মেয়র, ৩০ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ১০ জন নারী কাউন্সিলর নির্বাচনে ভোট দেন এই ভোটাররা। একই দিনে অনুষ্ঠিত সিলেট ও বরিশালে ১৫টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হলেও রাজশাহীর কোনো কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হয়নি।