রাজত্ব এখন বুবলির

ঢালিউডে সুসময় আর রাজত্ব, দুটিই এখন শবনম বুবলির দখলে। ২০১৬ সালে ‘বসগিরি’ ছবির মাধ্যমে ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে বড় পর্দায় আসেন বুবলি। প্রথম ছবিতেই তার বজিমাত।

এ ছবিতে শুধু তার দক্ষ অভিনয় নয়, ‘দিল দিল দিল’ গানটির সঙ্গে অসাধারণ নাচে মাতোয়ারা হলেন দর্শক। বুবলির নাচের জীবন্ত মুদ্রায় দর্শক এতটাই অভিভূত হয়ে পড়লেন যে. ইউটিউবে এ পর্যন্ত এ গানের ভিউয়ারের সংখ্যা ৩ কোটি ৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে; যা কোনো চলচ্চিত্রের গানের জন্য রীতিমতো রেকর্ড বলা যায়।

কীভাবে এমন চমৎকার নাচ উপহার দিলেন বুবলি? এমন প্রশ্নে তার সাবলীল উত্তর- ছোটবেলাতেই নাচ শিখেছি, পরে পড়াশোনা আর চাকরির কারণে নাচের চর্চা কন্টিনিউ করতে পারিনি। অনেক দিন পর যখন ‘বসগিরি’ ছবিতে নাচের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে গেলাম তখন প্রথমে কিছুটা সমস্যা হলেও কোরিওগ্রাফার আদিল শেখের কাছে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রমিং করেছি। ব্যস, এতেই নাচটা আবার আমার কাছে সহজে ধরা দিল। আর অভিনয়টা নির্মাতা রনি ভাই আর আমার কো-আর্টিস্ট শাকিব ভাইয়ের সহযোগিতায় নিজের মধ্যে সুন্দরভাবে ধারণ করতে পেরেছি। এতে করে প্রথম ছবিতেই দর্শকমন কাড়তে আমাকে আর বেগ পেতে হয়নি।

এই তো গেল প্রথম ছবি ‘বসগিরি’ দিয়ে বুবলির সুপারস্টার হওয়ার গল্প। এরপর ‘শুটার’-এ দর্শক পেল আরও এক প্রাণবন্ত বুবলিকে। শুধু দর্শক নয়, নির্মাতাদের চোখও কপালে উঠল। ছোট পর্দার একজন সংবাদ উপস্থাপিকা কীভাবে বড় পর্দায় এসেই দর্শক- নির্মাতাদের দক্ষ কর্মযজ্ঞ দিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন। ভাবনাটা বারে বারে সবার মনে সংগোপনে লতিয়ে ওঠে। সবার চোখেমুখে শুধু একটিই স্বপ্ন আর ছবি, যার নাম অভিনেত্রী বুবলি। সবার মুখে মুখে একটিই গান… ‘আমি তো হয়েছি সারা, ভালোবাসায় দিশেহারা, বুঝি না কিছু তুই ছাড়া, দিয়েছি তোকে দিল দিল দিল, তোকে ছাড়া বাঁচা মুশকিল।’

শুধু ‘বসগিরি’ আর ‘শুটার’ দিয়ে বুবলির অভিনয় কারিশমায় ছেদ পড়েনি। এরপর এলো তার ‘অহংকার’ আর ‘রংবাজ’। ছবি দুটিতে পারফেক্ট ‘অহংকারী’ আর ‘রংবাজ’ কন্যা হিসেবে তাকে আবিষ্কার করতে পেরে দর্শকের মন মহা আনন্দে টইটম্বুর। এই আনন্দ ঢাকাই চলচ্চিত্রে আরেকজন সুপার-ডুপার স্টার পাওয়ারই আনন্দ। যার কোনো সীমা নেই।

নব্বইয়ের দশকে দেশীয় চলচ্চিত্রে আসা অভিনেত্রী শাবনাজ, শাবনূর, মৌসুমী, পপি, পূর্ণিমারা দীর্ঘ সময় বড় পর্দা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। এরপর ২০০৬ সালে এলেন অপু বিশ্বাস আর ২০১২ সালে মাহিয়া মাহি। তাদের অভিনয়েও দর্শক মুগ্ধতায় ভাসলেন। তারপর অনেকেই এলেন আর গেলেন। দর্শকের মনের মণিকোঠায় স্থান গড়তে পারলেন না। দর্শক আর নির্মাতাদের চোখেমুখে তখন শুধুই অন্ধকার। ঢাকাই চলচ্চিত্রে নায়িকার বড়ই অভাব। এক সময় সেই ঘন কালো অন্ধকার ভেদ করে ঢালিউডের আকাশে আলো ছড়াতে উদিত হলো নতুন সূর্য। এই সূর্যের নাম বুবলি, বুবলি আর শুধুই বুবলি। বুবলির আলোর ফোয়ারায় এখন আলোকিত এ দেশের চলচ্চিত্র।

গেল ঈদে দর্শক দেখলেন বুবলির ‘সুপার হিরো’। এ ছবিতে শুধু রোমান্টিক নয়, অ্যাকশন গার্ল হিসেবেও দর্শকের সামনে উপস্থিত হলেন সুপার হিরোইন বুবলি। বুবলির এমন পৃথিবী আলো করা কর্মে দর্শক আর নির্মাতারা শুধুই বড় পর্দায় চাইছেন সুপারগার্ল বুবলিকে আর তাকে ভালোবেসে গাইছেন- ‘দিয়েছি তোকে দিল দিল দিল, তোকে ছাড়া বাঁচা মুশকিল’…। বুবলির এমন আকাশছোঁয়া সাফল্যে তার দরজায় অনবরত কড়া নেড়ে চলেছেন নির্মাতারা। সবাই তাকে ছাড়া আর কিছুই বুঝতে চান না। বুবলি কিন্তু আবেগকে দুই হাতে এক পাশে সরিয়ে রেখে বিচক্ষণতার সঙ্গে গল্প পড়ে চলেছেন। দর্শকের ভালোলাগাকে আপন হৃদয়ে ধারণ করার সফলতা দেখাতে চাইছেন। তাই প্রস্তাব পেলাম আর লুফে নিলাম— সেই ভুল তিনি করছেন না। এতে বুবলির প্রতি দর্শক-নির্মাতার আস্থা বাড়ছে শতগুণ।

আসন্ন ঈদে আবার বড় পর্দায় ঝড় তুলতে ‘ক্যাপ্টেন খান’ নিয়ে আসছেন ভালোবাসায় সিক্ত কন্যা বুবলি। দর্শক এখন এই ছবিতে নতুন আরেক বুবলিকে দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন।

এদিকে বুবলি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতা বলেন, ‘আমি বুবলি অভিনীত বসগিরি আর রংবাজ ছবি দুটি দেখেছি। তার অভিনয়ে কারিশমা আছে। যথেষ্ট মেধার পরিচয় দিয়েছে সে। অভিনয়কে ধ্যান-জ্ঞান হিসেবে নিয়ে এগোলে সে নিশ্চিতভাবে এ দেশের চলচ্চিত্রে চিরস্থায়ী একটি আসন গড়ে নিতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস’।