চার বছরেও শেষ হয়নি মাওলানা ফারুকী হত্যা মামলার তদন্ত

মাওলানা ফারুকী‘আমরা এ সরকারের কাছেই বাবার হত্যার বিচার চেয়েছিলাম। চার বছর হয়েছে। মামলার এখনও তদন্তই শেষ হয়নি। তারপরও আশায় আছি, সংশ্লিষ্ট সবার সদিচ্ছায় আমরা এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার পাবো।’ জঙ্গিদের হাতে নিহত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের কাফেলা অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও হাইকোর্ট মাজার মসজিদের খতিব মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীর ছেলে আহমেদ রেজা ফারুকী এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘চার বছর হয়ে গেলো। এখনও তদন্তই শেষ হয়নি। বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি।

আসামিরাও ধরা পড়েনি। কেন, কী কারণে তদন্ত শেষ করতে দেরি হচ্ছে সেটাও জানি না। তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়ে নতুন কেউ আসলে একবার ফোনে খোঁজ নেন। এরপর আর কোনও খোঁজ থাকে না। বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে জড়িত কত জঙ্গি, অপরাধী ও খুনি ধরা পড়ে, কেবল আমার বাবার খুনিরাই ধরা পড়ে না। ন্যায়বিচারের আশায় সবকিছু সরকারের ওপর ছেড়ে দিলাম, যা করার তারাই করবেন।’

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাওলানা ফারুকী হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। নতুন অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই এসব বলতে রাজি নন তারা। তদন্ত করতে গেলে অনেক দিক খতিয়ে দেখতে হয়। ফলে সবকিছু না গোছানো পর্যন্ত এ হত্যার মূল রহস্য সম্পর্কে বলা যাবে না। রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী। হত্যাকাণ্ডের একদিন পর ফারুকীর ছেলে ফয়সাল ফারুকী বাদী হয়ে অজ্ঞাত আট-নয় জনকে আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা ও ডাকাতির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

প্রথমে থানা পুলিশ ও পরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে। মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তরের পর তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন আকন্দকে। এক বছরের মাথায় ২০১৫ সালের শেষের দিকে মামলাটি ডিবি থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়। তখন মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডি’র পরিদর্শক আরশেদ আলী মন্ডলকে।

সম্প্রতি তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইমের সিনিয়র এএসপি মাহমুদ তালুকদার। মাওলানা ফারুকী হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ রয়েছে বলে জানান তিনি। বর্তমানে এ মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির অর্গানাইজড ও ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলামও এ বিষয়ে এ মুহূর্তে কিছু বলতে রাজি হননি।

ঢাকা মহানগর আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ জানান, সর্বশেষ গত মাসের ৮ জুলাই আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় বিচারক মাজহারুল হক আগামী ১৬ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করে আদেশ দেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, এ হত্যাকাণ্ডের পর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে পরিচিত শায়খ মোযাফফর বিন মুহসিনসহ আনসারুল্লাহ’র তিনজন, জেএমবি’র ছয়জন ও হরকাতুল জিহাদের তিন সদস্যসহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এর মধ্যে মোযাফফর বিন মুহসিন জামিনে ছাড়া পান। জেএমবি’র ছয়জনসহ ১২ জন এখনও কারাগারে রয়েছেন।