কমলাপুর রেল স্টেশনে ট্রেনে উঠতে যাত্রীদের হুড়োহুড়িরাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে প্রায় প্রতিটি ট্রেনই দেরিতে ছাড়ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে স্টেশনগুলোতে যাত্রী উঠানামায় দেরি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না ট্রেনগুলো। এজন্য স্টেশন থেকে ছাড়তেও দেরি হচ্ছে। ফলে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। ঈদযাত্রার প্রথম দিন থেকে আজ তৃতীয় দিন পর্যন্ত ট্রেনের এমন চিত্র দেখা গেছে।
রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, স্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে উত্তরবঙ্গের চিলাহাটিগামী নীল সাগর এক্সপ্রেস। ট্রেনটি সকাল ৮টায় স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এটি স্টেশনে আসে ১০টা। বেলা ১১টায়ও স্টেশন ছেড়ে যায়নি।
ট্রেনটি স্টেশনে আসার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে উঠতে থাকে। মুহূর্তেই পুরো ট্রেন ভরে যায়। অনেকেই আসনের টিকিট কেটেও সিটে বসতে পারেনি। মানুষের ভিড়ে নির্ধারিত বগি পর্যন্তও পৌঁছতে পারেননি কেউ কেউ।
স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তানসহ সকাল সাড়ে ৬টায় স্টেশনে আসেন আব্দুল্লাহ রাজিব। তিনি বলেন, সকাল ৮টায় স্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও এখন ১১টা বাজে। কখন যে ট্রেন ছাড়বে এখনও নিশ্চিত নয়।
ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন রবিবারের ট্রেনের সূচি অনুযায়ী সকাল ৬টায় কমলাপুর থেকে দিনের প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেস রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি এক ঘণ্টা পর সকাল ৭টায় ছেড়ে যায়।
এই ট্রেনের যাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রোবাইয়া আক্তার বলেন, সকাল ৫টায় স্টেশনে এসেছি। এখন বাজে পৌনে ৭টা। অনেক কষ্ট হচ্ছে। এমনিতেই মানুষের ভিড় আর দেরিতে ছাড়া হচ্ছে। পথে পথে আরও কত দেরি হয় জানি না।’
খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে যায় সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে।
রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস বেলা ৯টায় স্টেশনে আসার কথা থাকলেও সেটি বেলা ১১টায়ও কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাতে পারেনি। এই ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন শত শত যাত্রী। এই ট্রেনের যাত্রী রাজিব বলেন, এবার ট্রেনের শিডিউলে যেভাবে বিপর্যয় ঘটছে অন্যান্য বছর এমন বিপর্যয় ঘটেনি। অনেক মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।
দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস ৫নং প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। ট্রেনটি সকাল ১০টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি পৌনে ১১টায় কমলাপুরে আসে। এটি কখন ছাড়বে সে বিষয়েও তখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
লালমনিরহাট ঈদ স্পেশাল ট্রেন ছাড়ার কথা বেলা ৯টা ১৫ মিনিটে। বেলা ১১টা পর্যন্ত ট্রেনটি স্টেশনেই আসেনি। তবে এই ট্রেনটি বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দিয়েছে রেলওয়ে।
ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন রবিবার কমলাপুর স্টেশনের চিত্র এটি। গত ১০ আগস্ট যারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর অগ্রিম টিকিট পেয়েছিলেন তারাই আজ ট্রেনযোগে ঢাকা ছাড়ছেন।
ট্রেনের এমন বিলম্বের বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘বিভিন্ন স্টেশনে আমাদের প্রতিটি ট্রেনের জন্য নির্ধারিত সময় ২-৩ মিনিট। কিন্তু যাত্রীর চাপের কারণে সেখানে ৫-৭ মিনিট করে দেরি করতে হচ্ছে। এভাবে প্রতিটি স্টেশনেই দেরি হয়। যে কারণে ট্রেনগুলো কমলাপুরে আসতে দেরি হচ্ছে। এজন্য ছাড়তেও দেরি হচ্ছে। আমরা সব সময় চেষ্টা করছি যাতে কোনও ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় না হয়।
কমলাপুর স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রবিবার মোট ৬৮টি ট্রেন ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এরমধ্যে ৩১টি আন্তঃনগর, ৪টি ঈদ স্পেশাল, বাকি ট্রেনগুলো লোকাল ও মেইল সার্ভিস।