‘শেখ হাসিনা অনেক দিয়েছেন, এখন তাকে দিতে হবে’

চিকিৎসক ও নার্সদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ বছর আপনাদের অনেক দিয়েছেন। মান-মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছেন। আগামী তিন মাস আপনারা কোনো কিছু দাবি করতে পারবেন না। এখন দেয়ার সময়, দিতে হবে। আপনারা রোগীদের কাছে, তার জন্য ভোট চাইবেন।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর শ্যামলী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এই শোকসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

নাসিম বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের স্বাস্থ্য খাতে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে নতুন করে আরও ৭ হাজার ডাক্তারের পদায়ন করা হবে। তাদের ৩ বছরের জন্য গ্রামে পাঠানো হবে। ডিসেম্বরে আরও ৫ হাজার ডাক্তার নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৪০ হাজার চতুর্থ শ্রেণির পদ খালি রয়েছে। সেগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এসব নিয়োগ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। আগামী মাসের মধ্যে নতুন তিনটি (চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট) মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করা হবে। এক দশকেরও বেশি সময় পরে সম্প্রতি আমরা সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ৫০০ আসন বাড়িয়েছি।

তিনি বলেন, অচিরেই আরও নতুন চারটি মেডিকেল কলেজ ঘোষণা করা হবে। ফলে এবার এমবিবিএস কোর্সে সব মিলিয়ে আসন বাড়ছে প্রায় ৭’শ। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ডিপিসির মাধ্যমে সহকারী ও সহযাগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রদান করা হবে। এসবই করা হবে আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের মধ্যে।

নাসিম বলেন, নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে, কেউ গোপনে পানি ঘোলার করার চেষ্টা করছে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে পানি ঘোলা করে কোনো লাভ নেই। আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হচ্ছে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু আমাদের সংবিধান অনুসারে সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার তিন মাসের ভেতরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই এ সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, সব সরকারের আমলে কিছু ভুলত্রুটি হয়। আমাদেরও কিছু ছোট ছোট ভুল হয়েছে। সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো কোনো মন্ত্রীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন, এমপিদের শাস্তি হয়েছে, জেলে যেতে হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে সেই ছোট ভুলের জন্য যেন আমরা বড় ভুল করে না বসি। তাহলে আবার দেশে হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা হবে। দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হবে। বাংলাদেশ আবার অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।

নাসিম বলেন, বিএমএ এবং স্বাচিপ নেতারা যদি সহযোগিতা করেন তাহলে এই সরকারের আমলেই আমি ‘চিকিৎসা সুরক্ষা আইন’ মন্ত্রিসভা ও জাতীয় সংসদের মাধ্যমে পাস করে যেতে চাই।

১৫ আগস্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব না দিলে যুগের পর যুগ বাঙালি জাতি পারাধীন থাকত। নেতাজি সুভাস বোস, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানীর মতো নেতারা যা পারেননি বঙ্গবন্ধু তাই পেরেছেন। তিনি এ দেশ স্বাধীন করেছেন। অথচ বিগত সময়ে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন, তারা তাকে ছোট করতে চেয়েছেন। কিন্তু যারা তাকে ছোট করতে চেয়েছেন তারাই ছোট হয়েছেন।

নাসিম বলেন, চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুং-এর সমালোচনা আছে। একইভাবে ভারতে মাহাত্মা গান্ধী, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণ সবারই সমালোচনা আছে। কিন্তু জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে, জাতির জনক হিসেবে গোটা দেশ তাদের সম্মান করে। কিন্তু এ দেশে পঁচাত্তর-পরবর্তী সরকারগুলো বঙ্গবন্ধুকে ছোট করতে চেয়েছে। তারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা খুনিদের রাষ্ট্রদূত করে বিদেশে পাঠিয়েছে, সংসদে বসিয়ে জাতীয় সংসদকে কলঙ্কিত করেছে।

বিএনপির উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতারা বলেন- ২১ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নয়। কিন্তু তারা যে জড়িত সেটা দিবালোকের মতো সত্য। তখন খালেদা দিয়া ক্ষমতায় ছিলেন। তার নির্দেশে গ্রেনেড হামলার আলামত সরানো হয়। এমনকি এই নারকীয় ঘটনার কোনো তদন্ত পর্যন্ত হয়নি। ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তারা জজ মিয়া নাটক সাজায়।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে এ বোমা হামলার ঘটনার সাক্ষীপ্রমাণের ভিত্তিতে বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, বিচারের রায়ে সেসব খুনিরা শাস্তি পাবে।