গণমাধ্যম ও সুশীল ছদ্মবেশীরাই সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বেশি সক্রিয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে যুবলীগ আয়োজিত শোক দিবসের মাসব্যাপী কর্মসূচির সমাপনী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত নয়, আমাদের মধ্যে অনেক ছদ্মবেশী শত্রু রয়েছে। আর শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য ছদ্মবেশী শত্রুরাই এখন বেশি সক্রিয়। এরাই গুজব সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে। তারা সুশীলে আছে কিছু আবার কিছু আছে গণমাধ্যমে।
আর এই গণমাধ্যমের অংশটিই আজ দেশ-বিদেশে অপপ্রচার চালিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের ‘কুচক্রী মহল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য সারা দুনিয়ায় অপপ্রচার করেছেন। জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক বানানোর জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেছেন, নিরীহ শিশুদের যুক্তিসঙ্গত সামাজিক আন্দোলনকে নিয়ে ছদ্মবেশী কুচক্রীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে বললেন বাংলাদেশে গণহত্যা চলছে। যেখানে কোনো হতাহতের ঘটনাই ঘটেনি।
সেসব বিষয়ের এমন অপপ্রচারে নোবেল বিজয়ীদের পর্যন্ত বিবৃতি দিতে প্রলুব্ধ করেছে। আর এ কুচক্রী মহলের কতটা আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক রয়েছে সেটা এখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বিএনপির বিচার চাওয়ার বক্তব্যকে কটাক্ষ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২১শে আগস্টের খুনিদের পৃষ্ঠপোষকরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চায়! বিএনপি নেতারা ২১শে আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার চান। এটাকে কী বলবেন আপনি? ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচার চেয়ে বিএনপি ইতিহাসের নৃশংস বর্বোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতি নিষ্ঠুর রসিকতা করছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, ধিক্কার জানাই এ রাজনীতিকে, ধিক্কার জানাই এ নোংরা রাজনীতিকে। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এরা খুন করে খুনের বিচার চাইতে পারে, দুর্নীতি করে দুর্নীতির বিচার চাইতে পারে, দণ্ডিত হয়েও নিরাপদ বলে নিজেদের জাহির করতে পারে। দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে শেখ হাসিনাকে হটানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা এখন আর ক্ষমতা চায় না, কারণ তারা জানে নির্বাচন হলে ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তাই চক্রান্তের চোরাগলি বাছাই করেছে।
দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে শেখ হাসিনাকে হটানোর ষড়যন্ত্র করছে তারা। তবে তারা যতই চক্রান্ত করুক না কেন, তাদের কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। কারণ, দেশের সাধারণ জনগণ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সঙ্গে আছে। আর এই জনগণকে সঙ্গে নিয়েই দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্রকারীদের উচিৎ জবাব দেয়া হবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
যুবলীগ সভাপতির সমালোচনা
এর আগে বক্তব্য দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, সচিবালয়ের চারপাশে এরা কারা? আজ তা জানতে ইচ্ছে করে। সচিবালয়ের গায়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাইনবোর্ড কেন? এসব প্রশ্ন ও বিবেকের জ্বালা মেটানোর জন্যই আপনাকে আজ এখানে ডেকে এনেছি। ঈদের আগে দু’দিনের ব্যবধানে ৮০০ লোককে জামিন দেয়া হলো, মিনিটে কতজন জামিন পেয়েছেন তাও জানার অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। ওমর ফারুক বলেন, সড়ক-মহাসড়কে নসিমন-করিমনসহ ছোট ছোট যানবাহন নিষিদ্ধ করেছেন, ভালো কথা। ছোট যান চলাচলের বিকল্প কিছু না করেই এটা যে করলেন তাতে কাজটা কি খুব ভালো হয়েছে? এ কাজ যে করেছেন, তাহলে আমার স্ত্রী অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেব কী করে? আমার মেয়েটা কি ট্রাকে করে কলেজে যাবে? আমার বাড়িতো মহাসড়কের পাশে, আমি চলাচল করবো কেমন করে? মহাসড়কের পাশে যারা বসবাস করেন তাদের জন্য কোনো বিকল্প রাস্তা তো রাখেননি।
এসময় ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে ভারতের বিখ্যাত শিল্পী মান্না দে’র গাওয়া জনপ্রিয় গানটি গেয়ে উঠেন তিনি। ‘তুমি কি সেই আগের মতোই আছো, নাকি অনেকখানি বদলে গেছো, জানতে ইচ্ছে করে, খুব জানতে ইচ্ছে করে। তবে, নিজের বক্তব্যের সময় জবাবে সেতুমন্ত্রী শুধু বলেন, আমার কোনো গাফিলাতি নেই, কোনো অবহেলা নেই। তার পরও আমার ভুলত্রুটি থাকতে পারে। আমিও তো মানুষ। তবে এটা বলতে পারি যে, গত সাত বছরে সড়কের জন্য যেসব মেগা প্রকল্প নেয়া হয়েছে, তা আমারই হাতে নেয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। আপনি নিজেও জানেন, এ কাজগুলো করা খুব কঠিন। ইকবাল মাহমুদ বাবলু’র সঞ্চালনায় ও যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, আনোয়ারুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, বেলাল হোসাইন, আতাউর রহমান, মাহবুবুর রহমান হিরণ, কাজী আনিসুর রহমান, মিজানুল ইসলাম মিজু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ প্রমুখ।