মোস্তাফিজের জন্মদিনে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের শুভেচ্ছা

একে একে পার করলেন তেইশ বসন্ত। পা দিলেন ২৪ বছরে। আজ ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বোলিং বিস্ময় মোস্তাফিজুর রহমানের জন্মদিন। ১৯৯৫ সালের এই দিনে সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

জন্মদিনে অসংখ্য ভক্ত-সমর্থকের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন মোস্তাফিজ। বিশেষ দিনটিতে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে আইপিএলের অন্যতম ফ্র্যাঞ্চাইজি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সও। গেল মৌসুমে দলটির হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন তিনি।

শুভেচ্ছাবার্তায় নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মুম্বাই লিখেছে- সুইং, অ্যাকুরেসি, ভ্যারিয়েশন্স; চিৎকার করে বলা যায় বোলারটির তূণে (ভাণ্ডার) সব আছে। শুভ জন্মদিন, মোস্তাফিজুর রহমান। শেষে ভালোবাসার প্রতীক চিহ্ন দিয়েছে দলটি। সেই সঙ্গে শুভ জন্মদিন মোস্তাফিজুর রহমান লেখা একটি কার্টুন ছবি জুড়ে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোস্তাফিজের পথচলা শুরু যুবরাজের মতো। সূচনালগ্নেই বল হাতে কাটার, স্লোয়ার, সর্পিল সুইং ছুড়ে উইকেটের পসরা সাজিয়ে চমকে দেন ক্রিকেটবিশ্বকে। বিস্ময়কর বোলিংয়ে হয়ে উঠেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘এক্স ফ্যাক্টর’।

মোস্তাফিজের অভিষেক টিটোয়েন্টি ম্যাচটি আজও চোখে ভাসে। ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের নাচিয়ে ছাড়েন তিনি। অনন্য এক ডেলিভেরিতে নিজের প্রথম শিকারে পরিণত করেন বিশ্ব ক্রিকেটের ত্রাস বুমবুম শহীদ আফ্রিদিকে। পরের শিকার আরেক বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান শোয়েব মালিককে। তার অসাধারণ বোলিংয়ে দিনটি নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ। বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন টাইগাররা।

ফিজের ওয়ানডে অভিষেক হয় আরও মহিমান্বিত। ওই বছর ১৮ জুন একই ভেন্যুতে কাটার-ভেলকিতে ভারতের ৫ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি। সেই তালিকায় ছিলেন রোহিত শর্মা, আজিঙ্কা রাহানে ও সুরেশ রায়নার মতো বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান। তার অনবদ্য বোলিংয়ে দীর্ঘদিন পর ভারতীয়দের হারানোর স্বাদ পান লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ৫ ম্যাচ সিরিজও ঘরে তোলে টাইগাররা।

দেশের হয়ে টেস্ট অভিষেকও রঙিন হয় মোস্তাফিজের। একই বছরের ১৫ জুলাই চট্টগ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনন্য বোলিং করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে শিকার করেন ৪ উইকেট।

তিন ফরম্যাটে তোপ দাগানো বোলিং করে দুনিয়ার তাবৎ ক্রিকেটবোদ্ধাদের দৃষ্টি কাড়েন মোস্তাফিজ। যার বদৌলতে ডাক পান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আইপিএলে। সেখানেও বাজিমাত করেন কাটার মাস্টার। সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে চ্যাম্পিয়ন হতে রাখেন অগ্রণী ভূমিকা। ১৬ উইকেট নিয়ে নির্বাচিত হন উদীয়মান সেরা খেলোয়াড়। বয়ে আনেন বাংলাদেশের জন্য গৌরব।

অভিষেকের পর এমন উড়ন্ত সময় কাটছিল বাঁহাতি পেসারের। ক্রিকেটবিশ্বে এমন ব্যাটসম্যান খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা তার ভয়ে থরথর করে কাঁপেননি। কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন। ক্যারিয়ারের এক বছর না পেরোতেই ইনজুরির হিংস্র থাবায় কুপোকাত হন তিনি।

যার শুরুটা হয় ২০১৬ সালে আইপিএল খেলতে গিয়ে। তবে তখন তা মাথাচাড়া দিয়ে না উঠলেও ওই বছরের জুলাইয়ে ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলতে গিয়ে বাগড়া বাধিয়ে বসে। কাঁধে ব্যথা পেয়ে প্রথমবারের মতো বড় ধরনের চোটে পড়েন ২৩ বছর বয়সী পেসার। শেষ পর্যন্ত যেতে হয় ছুরি-কাঁচির নিচে। অস্ত্রোপচারের পর চার মাসেরও বেশি সময় তাকে থাকতে হয় মাঠের বাইরে।

এর পর আরও তিনবার ইনজুরির ছোবল খেয়েছেন মোস্তাফিজ। তবে দমে যাননি। রাজকীয় প্রত্যাবর্তনে বারবার ফিরে এসেছেন। এখনও তার বোলিং তোপ অব্যাহত আছে। আশা করি আগামীতেও থাকবে। শুভ জন্মদিন মোস্তাফিজ!