রাশিয়ার কাছ থেকে বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ কেনার জেরে ভারতের ওপর অবরোধ আরোপের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জবাবে ভারত দুই দেশের মধ্যকার কৌশলগত সম্পর্কের কথা মাথায় রাখতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্রকে। দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠেয় প্রথম ২+২ সংলাপকে সামনে রেখে এই বার্তা দিয়েছে ভারত। এ খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। খবরে বলা হয়, ২+২ সংলাপে দুই দেশের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অংশ নেবেন।
ভারতের সরকারি সূত্রসমূহ বলেছে, ‘আমরা আশা রাখি ভারত ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে তা দেশটি ভুলে যাবে না। প্রত্যেক দেশের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক বিবেচনায় নিয়ে সেই দেশকে অবরোধ থেকে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে বাস্তবায়ন করতে হবে।’ তারা বলছেন, ৬ই সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় ২+২ সংলাপ হবে ভারতে এই বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বৈঠকগুলোর একটি।
বেশ কয়েকবার পেছানোর পর অবশেষে এই সংলাপ এমন সময় হতে যাচ্ছে যখন ইরানের কাছ থেকে তেল আমদানি ও রাশিয়ার কাছ থেকে ৬০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয়ের ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অবরোধের হুমকি পেয়েছে ভারত। উভয় ইস্যুই এই সংলাপে প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এস-৪০০ ক্রয় চুক্তি বাতিলে যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিলেও ভারত নিজের অবস্থানে অনড়। এছাড়া ইরানের কাছ থেকে তেল আমদানির বিষয়টি কেন ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝাতে ৩টি পয়েন্ট ঠিক করেছে ভারত।
প্রথমত, ভারতের জ্বালানি চাহিদার ৮৩ শতাংশই পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। আর এর ২৫ শতাংশই আসে ইরান থেকে আমদানিকৃত অপরিশোধিত তেলের মাধ্যমে।
দ্বিতীয়ত, ইরান থেকে তেল আমদানির বিকল্প কী হতে পারে সেই ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ চেয়েছে ভারত। এক্ষেত্রে দামের বিষয়টিও মাথায় রাখতে বলা হয়েছে।
তৃতীয়ত, ভারতের অনেক শোধনাগার শুধুমাত্র বিশেষ ধরণের অপরিশোধিত তেলের ওপর নির্ভরশীল। সব মিলিয়ে ভারত বোঝাতে চায়, ইরান থেকে তেল আমদানির বিষয়টি সম্পূর্ণই অর্থনৈতিক। যুক্তরাষ্ট্র বা ইরানের চাপে এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসবে না।
ইরান পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশে পরিণত হোক, তা ভারত চায় না। তবে পারমাণবিক জ্বালানি শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবহারের যে অধিকার ইরানের রয়েছে, তার প্রতি ভারত শ্রদ্ধাশীল।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহুল আলোচিত কম্যুনিকেশন্স, কম্প্যাটিবিলিটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাগ্রিমেন্ট (সিওএমসিএএসএ) চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এই চুক্তি হলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সুরক্ষিত যোগাযোগ প্রযুক্তি পাবে ভারত। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তিতেও প্রবেশাধিকার পাবে ভারত।
সংলাপে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে। ভারত চায় দেশটির কিছু সন্ত্রাসী সংগঠনকে তালিকাভুক্ত করুক যুক্তরাষ্ট্র।