৯ বছরে প্রাপ্তি ২ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা

>> ১৮ বছরে প্রতিশ্রুতির পরিমাণ ৮৭ হাজার ৭৬৪ মিলিয়ন ডলার
>> ওই সময়ে প্রাপ্তির পরিমাণ ৪২ হাজার ৬২৬ মিলিয়ন ডলার
>> ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৬২৯০.৭৫ মিলিয়ন ডলার প্রাপ্তি
>> সঠিক সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারাই এই ফারাক

২০০৯-১০ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত নয় বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগীদের কাছ থেকে বৈদেশিক সহায়তা এসেছে ২৮ হাজার ৬০১ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই লাখ ৩৭ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। এর আগে ২০০০-০১ থেকে ২০০৮-০৯ অর্থবছর পর্যন্ত নয় বছরে এ সহায়তার পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ২৫ মিলিয়ন ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় এক লাখ ১৬ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা।

অর্থাৎ আগের নয় অর্থবছরের তুলনায় পরের নয় অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তাপ্রাপ্তি বেড়েছে ১৪ হাজার ৫৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় এক লাখ ২০ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ পরের নয় বছরে সহায়তা বৃদ্ধি পেয়েছে ১০৪ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈদেশিক সহায়তাপ্রাপ্তির পরিমাণ প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে প্রতিশ্রুতির তুলনায় প্রাপ্তির মধ্যে অনেক গ্যাপ থেকে যাচ্ছে। এ গ্যাপ যত কমিয়ে আনা সম্ভব হবে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ততই ত্বরান্বিত হবে। ইআরডির (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) প্রতিবেদনেও একই চিত্র দেখা গেছে।

গত ২০০০-০১ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত এ ১৮ বছরে সহায়তা প্রতিশ্রুতির পরিমাণ ৮৭ হাজার ৭৬৪ মিলিয়ন ডলার। সহায়তাপ্রাপ্তির পরিমাণ ৪২ হাজার ৬২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ বিভিন্ন দাতা সংস্থা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু সহায়তা পাওয়া যায়নি এমন অর্থের পারিমাণ ৪৪ হাজার ৯৮৩ মিলিয়ন ডলার। যা মোট প্রতিশ্রুতির অর্ধেকেরও বেশি।

ইআরডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সর্বশেষ গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তাপ্রাপ্তির পরিমাণ ছিল ৬২৯০.৭৫ মিলিয়ন ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৫২ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর এক অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার দিক থেকে এটাই সর্বাধিক।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০৯-১০ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত অর্জিত বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ ২৮,৬০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; অর্থাৎ প্রতি অর্থবছরে গড়ে প্রায় ৩,১৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা পাওয়া গেছে। এর আগে ২০০০-০১ থেকে ২০০৮-০৯ অর্থবছর পর্যন্ত সহায়তার পরিমাণ ১৪,০২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; অর্থাৎ প্রতি অর্থবছরে গড়ে প্রায় ১,৫৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা পাওয়া গেছে।

২০০০-০১ থেকে ২০০৮-০৯ অর্থবছরের সহায়তার তুলনায় ২০০৯-১০ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৫৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ ১০৪ শতাংশ বেশি।

এদিকে ২০০৯-১০ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে ৭০ হাজার ২৯৬ মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় পাঁচ লাখ ৮৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি অর্থবছরে গড়ে প্রায় ৭,৮১০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৬৪ হাজার ৮২৩ কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।

২০০০-০১ থেকে ২০০৮-০৯ অর্থবছর পর্যন্ত বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতির পরিমাণ ছিল ১৭,৪৫৮ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ এক লাখ ৪৪ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি অর্থবছরে গড়ে প্রায় ১,৯৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ এক হাজার ৬১০ কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়।

২০০০-০১ থেকে ২০০৮-০৯ অর্থবছর পর্যন্ত অর্জিত প্রতিশ্রুতির তুলনায় ২০০৯-১০ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে অর্জিত বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতির পরিমাণ প্রায় ৫২,৮৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ ৩০৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে দেশ পরিচালনায় দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এ সরকার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১) প্রণয়ন করে। এই দীর্ঘমেয়াদের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

তিনি বলেন, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহের আলোকে ২০০৯ সাল থেকে সরকার উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। অভ্যন্তরীণ উৎস হতে সম্পদ সংগ্রহের পাশাপাশি বিদ্যুৎ-জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, সেতু, সড়ক ও রেলসহ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে সরকার বৈদেশিক সহায়তা কার্যক্রম জোরদার করে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং ২০১৫ পরবর্তী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজনীয় সরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিতকল্পে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বৈদেশিক অর্থায়ন সংগ্রহের কাজ করে যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সহায়তার প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড়েরর মধ্যে কিছুটা কম-বেশি থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কম-বেশির পারিমাণ একটু বেশি।’ এর কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, যেসব প্রকল্পের সহায়তা পাওয়া যায় সঠিক সময়ে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। এখনও প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, একটা প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়িত না হলে এর প্রভাব অর্থনীতিতে দুভাবে পড়ে। প্রথমত, প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে। দ্বিতীয়ত, সঠিক সময়ে ওই প্রকল্পের বেনিফিট জনগণ পান না। তাই নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জোর দিতে সরকারকে পরামর্শ দেন এ অর্থনীতিবিদ।