২৮০ আসন চায় আওয়ামী লীগের শরিকরা

আওয়ামী লীগের কাছে মহাজোট শরিকদের চাওয়া ২৮০ আসন। আওয়ামী লীগ দিতে চায় সর্বোচ্চ ৭০ আসন। এ নিয়ে ভিতরে ভিতরে চলছে দরকষাকষি। কর্মী নেই, এক নেতার এক দল, রাজধানীতে মাত্র একটি কার্যালয় কিন্তু সেই সব দলের নেতাদের চাহিদাই বেশি। কেউ কেউ মুখিয়ে আছেন একাদশে জোটের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হলেও ক্ষমতায় এলে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হওয়ার জন্য। ক্ষমতাসীন ১৪ দলের জোটে ১৩টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর মধ্যে অনেকেরই নিবন্ধন নেই। জাতীয় পার্টি মহাজোটের শরিক। বিএনপি সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টি মহাজোটে থেকেই নির্বাচন করবে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কাছে জাতীয় পার্টি চায় ১০০ আসন এবং কমপক্ষে পাঁচজন মন্ত্রী। ১৪-দলীয় জোটের শরিকরা চায় ১৮০ আসন। বর্তমানে জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের শরিকদের মধ্যে সংক্ষিত আসন মিলিয়ে জাসদের ছয়টি, ওয়ার্কার্স পার্টির সাতটি, তরিকত ফেডারেশন দুটি, জাতীয় পার্টি-জেপির দুটি আসনে বর্তমান এমপি রয়েছেন।

জাতীয় পার্টির সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রার্থিতা নিয়ে দরকষাকষি শুরু হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসন এবং পাঁচ থেকে আটজনকে মন্ত্রী করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এখনো কোনো কিছুই পরিষ্কার করেনি। তবে চলতি মাসের শেষের দিকে জোট শরিকদের নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠক করতে পারেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা ৬৫ থেকে ৭০টি আসন জোটকে ছেড়ে দেব। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
জাতীয় পার্টি এককভাবে, নাকি মহাজোটে নির্বাচনে অংশ নেবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরশাদ সাহেব ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গেই নির্বাচন করবেন। তবে জোটের সমীকরণ হবে রাজনৈতিক মেরুকরণের ওপর।’

১৪-দলীয় জোটের একাধিক শরিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এবার আওয়ামী লীগের কাছে বেশি আসন চাইবেন। তবে কেউ কেউ জানিয়েছেন, জোটের স্বার্থে, জোটকে আবার ক্ষমতার আনার জন্য সব ধরনের ছাড় দিতে তারা প্রস্তুত রয়েছেন।

সূত্রমতে, জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ৩৫টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু) ৩০টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (আম্বিয়া) ১৮টি, জাতীয় পার্টি-জেপি ২২টি, গণতন্ত্রী পার্টি ১৫টি, তরিকত ফেডারেশন ৩০টি, ন্যাপ ১০টি, গণতন্ত্রী মজদুর পার্টি দুটি, গণআজাদী লীগ পাঁচটি, বাসদ পাঁচটি ও সাম্যবাদী দল পাঁচটি আসন চাইবে। এদের কেউ কেউ জোটপ্রধানকে তালিকাও দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (আম্বিয়া) সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, ‘আমরা জোটপ্রধান আওয়ামী লীগের কাছে ১৮টি আসন চেয়েছি। তাদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি। আশা করি আলোচনার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রাপ্যতা পাব।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু) কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো আমাদের দলে শতাধিক যোগ্য, মুক্তিযোদ্ধা, এলাকায় সুপরিচিত ও দক্ষ প্রার্থী রয়েছেন। তবে জোট রাজনীতির কারণে আমরা জোটের কাছে ৩০টি আসনে জোর গুরুত্ব দেব। আমাদের প্রত্যাশা, যেখানে যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন, সেখানে শরিকপ্রধান আওয়ামী লীগ আমাদের ছাড় দেবে।’

ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘বর্তমান সংসদে আমাদের দলের সাতজন এমপি রয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য আমরা দলের মনোনয়ন বোর্ড ৩৫ জনের শর্ট লিস্ট তৈরি করেছি। ১৪-১৫ তারিখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’

জাতীয় পার্টি-জেপি মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের দলের ২২ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই ২২ জনের তালিকা আওয়ামী লীগের কাছে জমা দেওয়া হবে। সেসব আসনে যদি আমাদের দলের চেয়ে অন্য দলে ভালো এবং উইনেবল প্রার্থী থাকেন, তাহলে তাদের মনোনয়ন দেবে এতে আমাদের আপত্তি নেই। জোটের বিজয়ই আমাদের বড় চাওয়া।’

গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলের মনোনয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘বেশ কিছু জেলায় আমাদের সাংগঠনিক অবস্থান মজবুত। আমাদের দলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত, একাদশ সংসদ নির্বাচনে আমরা আওয়ামী লীগের কাছে ১০ থেকে ১৫টি আসন চাইব। মুক্তিযুদ্ধের শক্তির ঐক্যের জন্য আবারও ১৪ দলকে ক্ষমতায় আনতে হবে।’

তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব রেজাউল হক চাঁদপুরী বলেন, ‘আমাদের দলে অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্য থেকে আমরা ৩০ জনের নাম চূড়ান্ত করেছি। এ তালিকাই দেওয়া হবে জোটপ্রধান দলের কাছে।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে এবং জোটের স্বার্থে আমরা ছাড় দিতেও প্রস্তুত। ৩০টি আসন যদি না দেয়, যে আসনে যাকে সর্বাধিক যোগ্য মনে হয়, তাকে মনোনয়ন দিলেও আমাদের আপত্তি নেই। তবে প্রায় প্রতিটি আসনেই আমাদের কমবেশি ভোটব্যাংক রয়েছে।’

কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, আমরা জোটপ্রধানের কাছে তিনটি আসন চাইব। ন্যাপের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ন্যাপ দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল। আগামী নির্বাচনে আমরা ১০টি আসন চাইব।’

গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনো জোটে কোনো আলোচনা শুরুই হয়নি। আমাদের দলে পাঁচ-ছয়জন প্রার্থী আছেন। জোট শরিকদের কাছে আমরা দুটি আসন চাইব। কোন দুটি চাইব তা দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে সিকদার বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে আমাদের চাওয়া পাঁচটি আসন।’

বাসদ আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান বলেন, ‘আমরা সংসদ নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। জোটপ্রধানের কাছে আমাদের পাঁচটি আসন দাবি।’

সাম্যবাদী দলের আহ্বায়ক ও সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়াকে একাধিকবার টেলিফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তিনি এবার পাঁচটি আসন চাইতে পারেন। এমপি হওয়ার চেয়ে তিনি আবার টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে জোটের অন্য শরিক দলের নেতাদের উপস্থিতি চোখে না পড়লেও দিলীপ বড়ুয়াকে পাওয়া যায়। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন