আবারো যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর সিজার বেসরকারি ক্লিনিকে

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকের ব্যবস্থায় পত্র না পেয়ে তাসমিনা বেগম (২০) নামে এক গৃহবধু হাসপাতালের সামনের একটি বেসরকারি ক্লিনিক থেকে সেবা নিতে হয়েছে বলে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। রোববার দিনগত গভীর রাতে হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। তিনি যশোর সদর উপজেলার রসুলপুর গ্রামের মাসুদ হোসেনের স্ত্রী।

এদিকে সোমবার সকালে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ পেয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

রোগীর স্বামী মাসুদ অভিযোগ করে বলেন, রোববার রাত ১১টার দিকে স্ত্রী তাসমিনার প্রচন্ড প্রসূতী বেদনা (ব্যাথা) ওঠে। তখন তাকে নিয়ে জরুরি বিভাগে আসা হয়। এ সময় ডা. আব্দুর রশিদ রোগীর অবস্থায় খারাপ দেখে প্রসূতী ওয়ার্ডে ইউনিট ওয়ানে ডা. রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে এই ইউনিটের সাত জন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রোগীকে ভর্তি করেন। যার রেজিষ্টেশন নাম্বর৪১৩০৭/২। এর পরে ওয়ার্ডের কতব্যরত সেবিকা রোগীকে তাদের সাধ্যমত সেবাদেন। এর মধ্যে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে তখন রাত একটার দিকে সেবিকারা ইন্টার্নী চিকিৎসককে ডাকেন তারা রোগী দেখে অনকল চিকিৎসক ডা. রিনা ঘোষ ও ডা. রাজিয়া আক্তারকে খবরদেন। কিন্তু দু’চিকিৎসক ইন্টার্নীদের কথা না শুলে রোগীকে ট্যায়ালে (কসরতে) রাখতে ইন্টার্ণী চিকিৎসককে বলেন। কিন্তু এর মধ্যে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হলে স্বজনরা রোগী ও গর্ভের সন্তানকে বাঁচাতে গভীর রাত সাড়ে তিনটার দিকে হাসপাতালের সামনে জেস ক্লিনিকে নিয়ে যান। সে খানে ডা. নাঈম হাসান তাসমিয়াকে দ্রুত অপারেসন ( সিজার) করে রোগীসহ গর্ভের সন্তানকে বাঁচান।

সকালে রোগীর স্বামী মাসুদ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ হাতে পেয়ে কর্তৃপক্ষ ডা. মণিকা রানী মোহন্তকে প্রধান করে তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির অন্য দু’জন হচ্ছেন ডা. আব্দুর রহিম মোড়ন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরিফুর রহমান।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের প্রসূতী ওয়ার্ডের সেবিকারা জানান, রোগী আসার পরে সধ্য মত সকল সেবা দেওয়া হয়েছে। খারাপ তাকায় ইন্টার্ণী চিকিৎসকদের খবর দেওয়া হয়। বর্তমান হাসপাতালের নিয়ম রয়েছে। সেবিকারা বিশিষজ্ঞ, সহকারী রেজিষ্টার এবং এমওদের কল দিতে পারবেন না। তার প্রথমে ইন্টার্ণী চিকিৎসকদের বলবেন। তারা প্রয়োজন মনে করলে বিশিষজ্ঞ, সহকারী রেজিষ্টার এবং এমওদের কল দিয়ে ডাক দিবেন।

তবে অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে প্রসূতি ওয়ার্ডে দুই ইউনিট মিলে হাসপাতালে মোট ১৭ থেকে ২০ জন চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু তারা নিজেদের কতব্য সঠিক ভাবে পালন না করে ক্লিনিক নিয়ে ব্যস্থ্য থাকেন। যে কারনে প্রতিদিন না হলেও হাসপাতাল থেকে ৫/৭ জন রোগীকে রেজিষ্টার খাতায় সেবিকারা পালাতক দেখাতে বাধ্য হচ্ছেন। এ বাদেও ২/৩ জনকে রেফার করা হচ্ছে ইন্টার্ণী চিকিৎসকদের দিয়ে।

এ ব্যাপারে ডা. রিনা ঘোষের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোনে জানান, রাতে হাসপাতাল থেকে সেবিকা ও ইন্টার্ণী চিকিৎসক তাকে কল দেননি এমন কি রোগী খারাপ জেনেও অনকলে অ্যাম্বুলেন্স পাঠাননী। গভীর রাতে অ্যাম্বুরেন্স বাড়িতে আসলে অবশ্যই আমি হাসপাতালে যেতাম। কিন্তু কেউ তাকে খবর দেননি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, ঘটনা জানতে পেরে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থ্যা নেওয়া হবে।