কোন্দল ঠেকাতে হার্ডলাইনে আওয়ামী লীগ

নির্বাচনের আগে যারা দলীয় কোন্দলে জড়াবে তাদের বিষয়ে হার্ডলাইনে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে মনোনয়ন নিয়ে বিদ্রোহ করলে তাদের বিষয়েও একই অবস্থান নেবে দলটি। নির্বাচনে প্রায় প্রতিটি আসনেই মূল দল ছাড়াও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাই মনোনয়ন চান। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকেই নিজ নিজ এলাকায় ইতিমধ্যেই কাদা ছোড়াছুড়িও শুরু করেছেন, যা চলতে থাকলে নির্বাচনে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে দলের নীতি-নির্ধারক নেতারা মনে করছেন। এ নিয়ে চিন্তিত হাইকমান্ড। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাই দলের নীতিনির্ধারণী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিদ্রোহ দমনে এখন থেকেই হার্ডলাইনে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

একইসঙ্গে দলীয় নেতাদের কোনো ধরনের নেতিবাচক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হওয়ার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। দলের বিপক্ষে কোনো নেতা-কর্মী যেন কথা না বলেন সে বিষয়েও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। দলের এসব নির্দেশ যারা অমান্য করবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে সংসদ সদস্যসহ দলের ১৩ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

সোমবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে দুই বিষয়ে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। দলের শীর্ষ কয়েক নেতা বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে ১০ জনকে শোকজ ও তিন জনের কাছে লিখিত জবাব জানতে চেয়েছেন সাধারণ সম্পাদক। এর মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারণে মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের জন্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দীন সিরাজ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। অপর দিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েও সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে সাতটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তা জানতে চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে। দিনাজপুরের বীরগঞ্জের এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপালকে নিজ সংসদীয় এলাকায় অবাঞ্ছিত করার কারণে বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকা, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট হামিদুল ইসলামকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

অপরদিকে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা কেন বিরুদ্ধে গিয়েছেন তার জবাব চাওয়া হয়েছে এমপি গোপালের কাছে। রাজশাহীতে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং পরিস্থিতির ব্যাখ্যা চেয়ে তাদেরকে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। বরগুনা-১ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে বিরোধের কারণে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টিপু এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হয়েছে তা জানতে চেয়ে চিঠিও দেয়া হয়েছে এমপি শম্ভুকে। এ প্রসঙ্গে গতকাল ওবায়দুল কাদের বলেন, ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি, যারা এমপিদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে, তাদের কড়া ভাষায় শোকজ করা হয়েছে। আবার যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের বলা হয়েছে দলীয় নেতা-কর্মীদের এত ক্ষোভ কেন।

দুই পক্ষকেই চিঠি দেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এর জবাব দিতে হবে। সব দিক বিবেচনা করেই এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগেই প্রতিটি আসনে দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দলীয় সূত্র জানায়, টানা নয় বছর ক্ষমতায় থাকায় তৃণমূল পর্যায়ে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে দ্বন্দ্ব-বিরোধ রয়েছে। এসব কারণে অনেক আসনেই একাধিক নেতা দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিজয়ী হতে পারেন এমন একজন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবেন। এক্ষেত্রে দল থেকে যাতে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী না হতে পারে বা প্রার্থী না হতে পেরে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করতে না পারে এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য কেন্দ্রীয় নেতারা আগে থেকে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব নিরসনে কাজ করছেন। সমপ্রতি দেশের বিভিন্ন জেলার বিরোধপূর্ণ আসন চিহ্নিত করে সাংগঠনিক সফর শেষ করেছে আওয়ামী লীগ। দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের নেতৃত্বে ১৫টি টিম ২৬শে জানুয়ারি থেকে সাংগঠনিক সফর শুরু করেন। কমিটিতে থাকা বেশ কয়েক সদস্য বলেন, সফরে বেশ কয়েকটি জেলায় দলের নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখতে পেয়েছি। আমরা সেগুলো মেটানোর চেষ্টা করছি। আমাদের পক্ষে কোন্দল মেটানো সম্ভব না হলে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যস্থা নেয়া হচ্ছে।

এদিকে দলীয় নেতাদের শোকজ নোটিশ পাঠানোর দিনেই ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তার এলাকার নেতারা। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে তারা এ সংবাদ সম্মেলন করেন। এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে আগামী শনিবার বৈঠকে বসছে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ কমিটির সভাপতি। এদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক হবে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকার, দলীয় মনোনয়ন ও নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। মানবজমিন