বিএনপিতে আটকে আছে সরকারি জোটের কৌশল

নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও দৌড়ঝাঁপ করছেন। কিন্তু নির্বাচনটা কেমন হবে- এটা নিয়ে এখনো সরকারি জোটের নেতারা অনিশ্চিত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জোট-মহাজোটের শরিকদের বলা হয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে একরকম আর না নিলে আরেক রকম কৌশল অবলম্বন করা হবে।

অর্থাৎ একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে সরকারি দল ও এর মিত্ররা আলাদা আলাদাভাবে ভোটে যাবে নাকি জোট-মহাজোটগতভাবে অংশ নেবে। বিএনপি ভোটে এলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে মহাজোট করাসহ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট আরও সম্প্রসারণ হতে পারে। আর এ কারণে আটকে আছে সরকারি জোটের নিজেদের মধ্যে আসন বণ্টনের কাজও।

যদিও আওয়ামী লীগ নিজ দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বলেছে, বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে আসবে ধরেই প্রস্তুতি নিতে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে ১৪-দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মহাজোটগতভাবে ভোট করা হবে। ড. কামাল হোসেন ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে যে বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এর অংশীদার হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগ জোট-মহাজোটে ধর্মভিত্তিক ও বাম ঘরানার দল এনে তা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেবে। আর বিএনপি না এলে সবাই আলাদা আলাদা ভোট করবে। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে একটা সমঝোতা থাকবে। কোনো কারণে বিএনপির একাংশকে নির্বাচনে আনা গেলে, তখন ওই অংশের সঙ্গেও একটা অনানুষ্ঠানিক সমঝোতা থাকবে।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির প্রথম বৈঠক হয়েছে গত শনিবার রাতে। সেখানে জেলায় জেলায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের প্রস্তাব এসেছে। এ ছাড়া ১৩৭ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় কমিটি থেকে বাছাই করে জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে একটা ছোট ‘কোর কমিটি’ গঠন করার বিষয়ে আলোচনা হয়। যারা নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ করবে। তবে এই বৈঠকে জোটের শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বলা হয়েছে, সরকারি দলের নিজস্ব জরিপে এগিয়ে থাকা ব্যক্তিরা মনোনয়ন পাবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাঠের পরিস্থিতি জানতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পরপর জরিপ চালানো হচ্ছে। জরিপে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী ছাড়াও প্রতিপক্ষ দল ও শরিকদের দলের প্রার্থী-কার কী অবস্থা, সেটাও দেখা হচ্ছে।

জরিপ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল দলীয় সূত্র বলছে, দলের বর্তমান মন্ত্রী-সাংসদদের মধ্যে জিততে পারেন—এমন ১০০ জনের তালিকা প্রথম চূড়ান্ত করা হবে। এরপর যে ১০০ আসনের প্রার্থী তালিকা হবে, তাতে নতুনদের প্রাধান্য থাকবে। এই দুই পর্যায়ের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ প্রায় চূড়ান্ত, দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে। তৃতীয় পর্যায়ে বাকি ১০০ আসনের তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ শুরু হবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আগে। তখন জোট-মহাজোটের সঙ্গে আসন বণ্টনের বিষয়টিও চূড়ান্ত করা হবে।

দলীয় উচ্চপর্যায়ের সূত্র বলছে, বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে শরিকদের আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের জরিপের ফলাফলকে বিবেচনায় রাখবে আওয়ামী লীগ। তবে শরিক দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা থাকবেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জরিপ অনুসারে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এটা শরিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তিনি বলেন, বিএনপি এলে জাতীয় পার্টিসহ মহাজোট করে নির্বাচনে অংশ নেবে আওয়ামী লীগ। আর না এলে ১৪ দলের জোট বহাল থাকবে। তবে জাতীয় পার্টিসহ অন্যরা আলাদা আলাদাভাবে অংশ নেবে।

তবে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, আসন বণ্টন বা মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির বেলায় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তারপরও শরিক দলগুলো নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনানুষ্ঠানিকভাবে তালিকা করছে। সেখান থেকে আওয়ামী লীগের কাছে কত আসন চাইবে, সে বিষয়েও কাজ করছে।

১৪ দলের শরিক একটি দলের শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না, তা এখনো স্পষ্ট হয়নি। প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে না থাকলে সরকারি জোটে শরিকদের কদর কমে যায়। তিনি বলেন, সরকারবিরোধী জোট-মহাজোট নির্বাচনে থাকলে সরকারি জোটের শরিকদের ভাগে আসন কম পড়তে পারে। কিন্তু শরিকদের গুরুত্ব বাড়বে। এখন কে কয়টি আসন পাবে, কোথায় পাবে-সবকিছুই নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের ইচ্ছার ওপর। সূত্র: প্রথম আলো