রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যায় মিয়ানমারকে অভিযুক্ত করল কানাডা

রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নির্মূল অভিযানে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে বলে ঘোষণা করতে কানাডার আইনপ্রণেতারা সর্বসম্মতভাবে ভোট দিয়েছেন।

এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের তথ্য-উপাত্তে অনুমোদন দিয়েছেন দেশটির হাউস অব কমনস সদস্যরা।

জাতিসংঘের গবেষকরা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা সেই অপরাধকে সমর্থন করেছেন।

কানাডার আইনপ্রণেতারা বলেন, তারা দেখতে পেয়েছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা গণহত্যা। কাজেই এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে তারা আহ্বান জানিয়েছেন।

এতে মিয়ানমারের জেনারেলদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও গণহত্যার অপরাধে তাদের বিচারেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধ কতটা মর্মান্তিক ও নিষ্ঠুর ছিল, সেদিকেই আমি জোর দিতে চাই। রোহিঙ্গারা যাতে ন্যায়বিচার পান ও অপরাধীরা যাতে জবাবদিহিতার আওতায় আসে, সেজন্য একটি আন্তর্জাতিক চেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছি আমরা।

আজকের এই সর্বসম্মত ভোট সেই চেষ্টারই একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত(আইসিসি)।

হেগের এই আদালতের কৌঁসুলি ফাতোও বেনসুদা মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে যেভাবে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বিতাড়িত করা হয়েছে, তাতে যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না-সে বিষয়ে প্রাথমিক তদন্তে হাত দিয়েছে তার দপ্তর।

রোহিঙ্গাদের বিতাড়নে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য মিয়ানমারের বিচারের এখতিয়ার হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রয়েছে বলে সিদ্ধান্ত আসার ধারাবাহিকতায় এই তদন্ত শুরু হল।

বিবিসি লিখেছে, আইসিসির এই তদন্তের পথ ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পথ খুলতে পারে।

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল।

গত এক বছরে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের কথায় উঠে এসেছে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ।