ক্যাম্পাসের বাতাসে প্রাণের নিশ্বাসে হারিয়ে গিয়েছিলেন মহাআনন্দে

হাসান মাহমুদ,রাবি: শনিবার সকাল ১১টা ৪৩ মিনিট। শরীরে কালো গাউন, কিট আর মাথায় ক্যাপ পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করছেন সবাই। গন্তব্যস্থল রাবির স্টেডিয়াম হলেও প্রধান ফটকে এসে হইত অনেকেই আবার দাঁড়িয়ে পড়ছেন হারিয়ে যাওয়া ক্যাম্পাসে। যেখানে তিনি জীবনের মূল্যবান পাঁচটি বছর অতিবাহিত করেছেন। গ্রাজুয়েশন শেষে হয়তো অনেকেরই আর আসা হয়নি এখানে। নিজের অজান্তে স্মৃতির পাতা থেকে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিগুলো যেন আবার এ ক্যাম্পাসে ডানা মেলতে চাচ্ছে। তাই সেই স্মৃতি আরো দীর্ঘ করতে উঠানো হচ্ছে ছবি।

ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের পাশে একটু দাঁড়িয়ে থাকতেই দেখা গেল, একজন বাবা তার শিশুকে বুকে নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছেন। সঙ্গে আছে শিশুর মা অথ্যাৎ তার স্ত্রী। ঠিক ১১টা ৪৭ মিনিটে দেখা গেল একটু ভিন্ন চিত্র। একই ধরণের পোশাক পরে একজন মা একই ভাবে নিজের সন্তানকে বুকে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকছেন। একটি ব্যাগ হাতে পাশেই তার স্বামী। ঠিক এমনি ভাবে কোনো পিতা/মাতা তার প্রাণের ক্যাম্পাসটি দেখিয়ে দিচ্ছেন তাঁর সন্তান, স্ত্রী ও স্বামীকে। দেখে মনে হল, রাবি’র ১০ম সমাবর্তনে এসে হারানো সেই ক্যাম্পাসের বাতাসে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন মহাআনন্দে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ম সমাবর্তনের সকালের পরিবেশটি ছিলো অন্য দিনের চেয়ে আলাদা। দিনভর সেখানে ছিল আনন্দ আর উচ্ছ্বাস। গ্রাজুয়েটদের পদচারণা, হাসি-আড্ডা আর উল্লাসের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। ১০ম সমাবর্তনকে ঘিরে শনিবারের চিত্র ছিল এমনই।

দিন শুরু হওয়ার পর পরই কালো গাউন আর মাথায় ক্যাপ পরে সমাবর্তনে যোগ দেন সব পিএইচডি, এমফিল ও স্নাতক ডিগ্রিধারীরা। সকাল থেকেই অপেক্ষা করছিলেন তারা। সুযোগ পেলেই পুরনো স্মৃতি খোঁজার চেষ্টা। দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসের পরিচিত রূপ নতুন করে ধারণের বাসনা। অপেক্ষা এই বুঝি এলো সে মাহেন্দ্রক্ষণ। এক সময় সব অপেক্ষার অবসান হয়। সমাবর্তনের প্রধান আকর্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ এর আগমনের পর।

শনিবার দিনটি যেন ছিলো শুধুই তাদের। সমাবর্তনে নিবন্ধিত গ্রাজুয়েটরা বিভাগ থেকে সমাবর্তনের ব্যাগ, কস্টিউমসহ অন্যান্য কাগজপত্র সংগ্রহ করছেন আগেই। পুরোনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে তারা অনেকটা স্মৃতিকাতর ও উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। অনেকেই দীর্ঘদিন পর কাছের বন্ধুকে পেয়ে আড্ডায় মেতে উঠেন। আবার অনেকে স্মৃতি বিজড়িত ক্যাম্পাসের নানা স্থান ঘুরে বেড়ান আপনমনে।

এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে দেখা যায়, দলে দলে গ্রাজুয়েটদের জটলা। প্রানবন্ত আড্ডা আর প্রানবন্ত উচ্ছাস। তাদের স্বাগত জানাতে ক্যাম্পাসজুড়ে ব্যানার, ফেস্টুন আর প্ল্যাকার্ড। প্রধান ফটক থেকে শুরু করে জোহা চত্বর, প্রশাসন ভবন, কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনসহ বেশ কয়েকটি ভবনে ছিল আলোকসজ্জা এবং বিভিন্ন সড়কে ছিল নানা রঙের আলপনা। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাস সেজেছিল বর্ণিল সাজে। জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মাননা গ্রহণের দিনটি ঘিরে উচ্ছ্বাসে তাই কোনো অংশেই কমতি ছিলো না কারো মনে।

অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান হয় শনিবার রাবি’র কেন্দ্রীয় স্টেডিয়ামে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আনন্দ আর উল্লাসে মাতোয়ারা হয় পুরো স্টেডিয়াম। সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতার পর শিক্ষার্থীরা আরও একবার সারা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েন। শুরু হয় ক্যাম্পাস জুড়ে ছবি তোলার প্রতিযোগিতা। আবেগী ক্ষণটি ধরে রাখার চেষ্টা। শিক্ষা জীবনের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যেন এতো আয়োজন। প্রতি মুহূর্তে নতুন সাজে রঙিন আর উচ্ছাসের ছবি ঠাই পাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের পাতাতেও।