রাষ্ট্রদ্রোহের কী করেছেন, প্রশ্ন জাফরুল্লাহর

সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদকে নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের কী করেছেন, তা বুঝতে পারছেন না জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সেনাপ্রধানের বিষয়ে বলতে গিয়ে শব্দ চয়নে ভুল হয়েছে জানিয়ে বিএনপিপন্থী এই বুদ্ধিজীবী বলেন, ‘এর জন্য তো আমি ক্ষমাও চেয়েছি। কেউ য‌দি সমালচনা করে সে কি রাষ্ট্রদ্রোহী? আমি একটা কথা বলেছিলাম কথাতে শব্দের ভুল ছিল। তাই বলে কি আমি রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছি?’

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন জাফরুল্লাহ। ‘মুভমেন্ট ফর জাস্টিস’ নামের একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়।

গত ৯ অক্টোবর একটি বেসরকাটি টেলিভিশনের টক শোতে জাফরুল্লাহ একুশে আগস্টের হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের উৎস নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দাবি করেন ২০০৪ সালে আজিজ আহমেদ চট্টগ্রামের জিওসি থাকাকালে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র খোয়া যায়। এ নিয়ে পরে কোর্ট মার্শাল হয় তার।

এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সেনাবাহিনী জানায়, আজিজ আহমেদ কখনও চট্টগ্রামের জিওসি ছিলেন না, আর তিনি তার চাকরি জীবনে কখনও কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি হননি।

পরে জাফরুল্লাহ তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে তিনি দাবি করেন, আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল না হলেও কোর্ট অব ইনকোয়ারি হয়েছিল।

পরে সেনাবাহিনী থেকে এই তথ্যকেও অসত্য বলে জানানো হয়। আর জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করা হয় সেনা সদরদপ্তরের পক্ষ থেকে। তার এই বক্তব্যের পেছনে কারা, সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয় এই ডায়েরিতে। পরে এই সাধারণ ডায়েরিটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।

জাফরুল্লাহ বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের মেরামত প্রয়োজন। আজকে দেখেন আমি একটা কথা বলেছি, কথাটাতে একটা ভুল ছিল। শব্দের ভুল ছিল, শব্দ বিভ্রাট হয়েছে, শব্দ চয়নে ভুল হয়েছে। তাহলে আমি কি রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছি?’

‘আমি যদি কারও সমালোচনা করি…, আমি ভুলটা স্বীকারও করেছি। আমি পরবর্তীতে স্বীকারও করেছি। তার মানে কী? রাষ্ট্র আজকে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে গেছে।’

‘গণতন্ত্র মানে হলো কথা বলার সুযোগ থাকা, সমালোচনা করা, এমনকি ভুল সমালোচনা করলেও তাকে করতে দি‌তে হবে। ভুল হলে সংশোধন করবে। যেমন আমি করেছি। এটাকে ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।’

শেখ হাসিনা অনেক ভালো কাজ করেছেন বলেও স্বীকার করেন জাফরুল্লাহ। বলেন, ‘হাসিনা দেশের যথেষ্ট উন্নয়ন করেছে। পদ্মা সেতু করছে।’

তবে এই সেতু করতে আট হাজার কো‌টি টাকা লাগার কথা ছিল দাবি করে ঐক্যফ্রন্ট নেতা প্রশ্ন তোলেন কেন সেখানে ৩৮ হাজার কো‌টি টাকা ব্যয় হচ্ছে।

এই বাড়টি টাকা শেখ হাসিনা নয়, তার চারপাশের চাটুকারদের হাতে গেলে চলেও দাবি করেন জাফরুল্লাহ।

আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা হারলে তাকে জেলে যেতে হবে না বলেও নিশ্চয়তা দেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা। বলেন, ‘তার যথাযথ বিচার হবে। তিনি জামিন পাবেন। খালেদা জিয়ার উপরে যে অন্যায় অত্যাচার হচ্ছে তার উপরে হবে না। একই জিনিস যদি পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে দেশে শান্তি আসবে কোথা থে‌কে?’

জাফরুল্লাহ বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার সমালোচনা করেন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মইনুল হোসেনও। বলেন, ‘আমার বন্ধু জাফরুল্লাহ সাহেব একটা ভুল করেছে, ক্ষমাও চেয়েছে। …এর পরে যা হলো, আমি নিশ্চই বিশ্বাস করি না এটা আর্মি চিফের চিন্তাভাবনা।’

‘এটা একটা স্বাধীন দেশ। ঠিক আছে একটা ভুলভ্রান্তি তো হতেই পারে। সেই জন্য দেশদ্রোহী মামলা দিতে হবে, এটা কী কথা?’

‘কষ্ট লাগে, আজকে মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে গেল? কি কথা একটু সমালোচনা করছে। এটা যেহেতু আমাদেরই সামরিক বাহিনী, একটু আধটু ভুলভ্রান্তি হতে পারে’- বলেন মইনুল।

সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক সানাউল হক নীরু এর সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মইনুল হোসেন, আ ব ম মোস্তফা আমিন, ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল প্রমুখ।