এরশাদের দিকে তাকিয়ে নেতাকর্মীরা

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান এবং নিজেদের শক্তি সমর্থন প্রদর্শন করতে চায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট। শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জোট আয়োজিত মহাসামবেশের শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে। ব্যাপক শো-ডাউন করে মহাসমাবেশে লোক সমাগম করতে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে শরিক দলগুলো।

জাপা এবার একক নির্বাচন মহাজোটের সঙ্গেই নির্বাচন করবে কিনা সেটাও পরিষ্কার হবে এ সমাবেশে থেকে। যদিও দলটি ইতিপূর্বে ৩০০ আসনে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে।

অন্যদিকে মহাজোট থেকে ১০০টি আসন চেয়েছে এমন ঘোষণাও এসেছে জাপার পক্ষ থেকে। তবে এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন স্বয়ং দলটির নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতেই কৌশল হিসেবে মহাসমাবেশকে সামনে নিয়ে এসেছে সম্মিলিত জোট।

ভোটের মাঠে রাজনৈতিক শক্তি আর জোটের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতেই মহাসমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে চায় জাতীয় পার্টি ও তার শরিক দলগুলো।

মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা পোস্টার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। দলীয় পোস্টারের পাশাপাশি শীর্ষ নেতাদের ছবিসহ ‘চলো চলো, ঢাকা চলো’ ব্যক্তিগত পোস্টারও শোভা পাচ্ছে অলিগলিতে। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সার্বক্ষণিক তদারকি করছে মহাসমাবেশের সার্বিক প্রস্তুতি। সমাবেশস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঞ্চ তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে। এর আগে গত ৮ই সেপ্টেম্বর জাতীয় পার্টির যৌথসভায় জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৬ই অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন। কিন্তু পার্টি চেয়ারম্যানের সিঙ্গাপুর সফর, বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের সম্মেলনসহ একাধিক কারণে ৬ই অক্টোবর মহাসমাবেশ বিলম্বিত হয়। কিন্তু ৭ই অক্টোবর জাতীয় পার্টির বানানী চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিদের যৌথসভায় ২০শে অক্টোবর মহাসমাবেশের তারিখ চূড়ান্ত করে দলটি। ২০শে অক্টোবরের মহাসমাবেশ সফল করতে ইতিমধ্যেই অনেক জেলায় সফর করেছেন জাতীয় পার্টি ও সম্মিলিত জাতীয় জোটের নেতারা। পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, রংপুর, খুলনা ও সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় মহাসমাবেশ সফল করতে কর্মিসভা সম্পন্ন করেছে দলটি। সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে ১৩ই অক্টোবর জাপা চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে সম্মিলিত জাতীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় ইসলামী মহাজোটের নেতৃবৃন্দ মহাসমাবেশ সফল করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।

১৪ই অক্টোবর সম্মিলিত জাতীয় জোটের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। ১৫ই অক্টোবর সকালে রাজধানীর গুলশান এক সার্কেলের ইমানুয়েলস মিলনায়তনে যৌথসভা করেছে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তর। পার্টির চেয়ারম্যান উপস্থিত না থাকলেও নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ পার্টির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে জাতীয় ছাত্রসমাজ, যুবসংহতি, শ্রমিক পার্টি, মহিলা পার্টি, স্বেচ্ছাসেবক পার্টিসহ অঙ্গসংগঠনগুলোও ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। সমাবেশ সফল করতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি গত শনিবার কয়েকশ’ নেতা-কর্মী নিয়ে শ্যামপুর-কদমতলী এলাকায় শো-ডাউন করেছেন। অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপির নেতৃত্বে মহাসমাবেশে ব্যাপক জমায়েতের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শেষের পথে। গত সোমবার রাতে জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে মঞ্চ তৈরির কাজ পরিদর্শন করেছেন। তিনি মঞ্চ তৈরির অগ্রগতি সম্পর্কে জানিয়েছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে।

মহাসমাবেশের প্রস্তুতি সম্বন্ধে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, জাতীয় পার্টি ও সম্মিলিত জাতীয় জোটের শরিক দলগুলো সর্বশক্তি প্রয়োগ করে আগামী শনিবারের মহাসমাবেশ সফল করবে।

তিনি বলেন, সারা দেশে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং লাঙলের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। নির্বাচনের আগে পার্টির নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের অন্তরে আত্মবিশ্বাস জোগাতেই মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে।

এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার আরো বলেন, মহাসমাবেশে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একাদশ সংসদ নির্বাচন ও জোট গঠন নিয়েও কথা বলবেন। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের কথাও বলবেন। ওইদিন মহাসমাবেশে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতিকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেবেন।

তিনি বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে জাতীয় পার্টি এখন অনেক শক্তিশালী, তাই আগামী নির্বাচনে আমরা সাধারণ মানুষের রায় নিয়ে একটি আধুনিক ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে পারবে। তিনি ২০শে অক্টোবরের মহাসমাবেশ সফল করতে সম্মিলিত জাতীয় জোটের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) খালেদ আখতার জানান, ইতিমধ্যেই মহাসমাবেশের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ডিএমপি এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে দলটি। সম্মিলিত জাতীয় জোটের মহাসমাবেশ দেশের রাজনীতিতে একটা ইতিবাচক বার্তা দেবে বলেও জানান খালেদ আখতার।

জাপা মহাজোটে যোগ দিবে নাকি একক নির্বাচন করবে- এমন কোনো ঘোষণা মহাসমাবেশ থেকে আসছে কিনা জানতে চাইলে মেজর আখতার বলেন, এটা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে আগামীদিনের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এবং সম্মিলিত জোটের বিষয়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানা যাবে।

এদিকে বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ মহাসমাবেশে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। পটুয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম মামুন কমিশনার জানান, শুধু জাতীয় পার্টি নয় এবারের মহাসমাবেশে ব্যাপক সংখ্যক আলেম ওলামা অংশ নেবেন।
তিনি বলেন, সমাবেশে অংশ নেয়া এবং উপস্থিতি নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে প্রতিটি জেলায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির শীর্ষ এক নেতা জানান, এবারের মহাসমাবেশেই জাতীয় পার্টির আগামী দিনের অবস্থান জানা যাবে। অনেক নেতারও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে এ সমাবেশের মাধ্যমে। সমাবেশ সফল করতে যারা ভূমিকা রাখবে, তাদের পুরস্কৃত করবেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মহাসমাবেশের পরই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকাও চূড়ান্ত করবেন পার্টির চেয়ারম্যান। আর এ কারণেই তৃণমূল নেতা-কর্মীরা ২০শে অক্টোবরের মহাসমাবেশকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন এবং জোটের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতেই জাতীয় পার্টি ২০শে অক্টোবরের নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করেছে। সূত্র: মানবজমিন