জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বিদায়ী বৈঠকে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বললেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। স্পষ্টভাবে জানালেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা ট্রাম্প প্রশাসনের আকাঙ্ক্ষার কথা। বললেন, যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশের বন্ধু। বন্ধু হিসেবে তার দেশ এবং সরকার বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অঙ্গীকারের কথাও স্মরণ করেন রাষ্ট্রদূত। বলেন, আমি আশাবাদী মানুষ। এখানে প্রায় ৩ বছর ধরে আছি। বাংলাদেশের অনেক ঘটনা এবং উন্নয়ন আমি দেখেছি। আশা করি এর ধারাবাহিকতা থাকবে।

রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রশ্ন ছিল বিদ্যমান পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষিত সুষ্ঠু এবং অংগ্রহণমূলক নির্বাচনের অনুকূল কি-না? জবাবে বার্নিকাট বলেন, অনেকের উদ্বেগ রয়েছে। উদ্বেগের কারণও আছে। এটি নিরসনে সরকার পদক্ষেপ নেবে। বিরোধী দলগুলোও অহিংস এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেবে। সরকার যেকোনো দলের এমন কর্মসূচি পূর্ণ নিরাপত্তা ও মুক্তভাবে পালনের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

রাষ্ট্রদূত একাধিকবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পেশিশক্তির ব্যবহার চায় না। তারা স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন দেখতে চায়।

নির্বাচনের আগে এবং পরে যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে সেই কামনাও করেন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানী সেতু ভবনের ওই বৈঠক শেষে মার্কিন দূত উপস্থিত সাংবাদিকদের অন্তত অর্ধডজন প্রশ্নের জবাব দেন। বলেন, মন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছি। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে তাকে জানিয়েছি যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশার কথা। নির্বাচনকালীন সময়ে অংশগ্রহণকারী দল ও তার প্রার্থীর সঙ্গে যারা ভোটার তাদের নিরাপত্তা, ভোটারের ভোটাধিকার এবং জনসাধারণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকে সেটাই চায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। নির্বাচনকালীন সময়ে ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে সেটা যেন কোনো কারণে বিঘ্নিত না হয় সেই কামনা করেন তিনি।

মার্কিন এই কূটনীতিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে গণতান্ত্রিক চর্চা দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিটি নাগরিকের যেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয় সেটি যুক্তরাষ্ট্রের একান্ত চাওয়া বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকার ও রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি দেশের জনগণকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

রাষ্ট্রদূতের ভাষ্য মতে, দেশের সকল মানুষকে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টিতে সচেতন হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশের জন্য শুধু সরকার ও রাজনৈতিক দলের উপর নির্ভর করলেই চলবে না। এ জন্য তাদের পাশাপাশি জনসাধারণকেও সোচ্চার থাকতে হবে। এমনকি পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের প্রত্যেক নাগরিক এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হবে বলে প্রত্যাশা করে যুক্তরাষ্ট্র।

সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী দল ও জোটের শীর্ষ নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ এবং কারাগারে থাকা বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বার্নিকাট বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পরিসর অনেক বড়। ৩০০ সিটে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অনেক প্রার্থী এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। যারা যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবে। প্রার্থীরা তাদের দলের দাবি তুলে ধরার সুযোগ পাবে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীরা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ এবং প্রত্যাশিত স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে সমস্যা হবে না। নির্দিষ্ট কারও জন্য এ প্রক্রিয়া থেমে থাকবে না।

অপর প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ভিন্ন মতাবলম্বীদের সঙ্গে সংলাপ হয়। দুনিয়া জুড়েই এ প্র্যাকটিস রয়েছে। কেবল বাংলাদেশ নয়, যেকোনো পরিস্থিতিতে যে কারও সংলাপ হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংকট নিরসন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংলাপের গুরুত্ব সব সময়ই রয়েছে।

বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতির উত্তরণে সংলাপ জরুরি বলে মত দেন তিনি। মার্কিন দূত নিজের দায়িত্ব পালনকালে সরকার তথা বাংলাদেশবাসীর সহায়তার কথা স্মরণ করে এবং গোটা দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। জানান, তার উত্তরসূরি রাষ্ট্রদূত আল মিলারের নিয়োগ এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে গেছে। মধ্য নভেম্বরে তিনি ঢাকায় তার মিশন শুরু করতে আসছেন। তার আগে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তিনি ঢাকা মিশন শেষ করছেন বলেও জানান।

এদিকে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণ আমাদের ভোট না দিলে আমরা থাকবো না। আশা করি দেশে এমন একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে যেখানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে। বিএনপি’র সঙ্গে সরকারের একটা ভালো ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকলে ভালো হতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।