রাবি শিক্ষার্থী লিপু হত্যার বিচার দাবি

‘লিপু হত্যাকান্ডের আজ দুই বছর হয়ে গেল। কিন্তু আমরা কোনো বিচার পেলাম না। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি আর কতদিন। আমাদেরকে কেন এই চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ যখন তথাকথিত উন্নয়ন এবং বলা হচ্ছে বাংলাদেশে নানা অগ্রগতি হচ্ছে তাহলে বিচারের অগ্রগতি কোথায়। বরং বিচারহীনতা এবং এইসব দৃষ্টান্ত যেখানে দুই বছর ধরে একটা তদন্ত রিপোর্ট বের হতে পারে না। এটা খুবই লজ্জাজনক ঘটনা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু হত্যার বিচার দাবিতে আয়োজিত মানবন্ধন কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন গনযোগাযোগ সাংবদিকতা বিভাগের সভাপতি আ-আল মামুন। শনিবার বেলা ১১টায় বিভাগের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী গোলাম মোস্তফার সঞ্চালনায় তিনি আরও বলেন, ‘লিপুর খুনের বিচার না হওয়াটা সরকারের জন্যও যেমন লজ্জাজনক, তেমনি সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের জন্যও। এই লজ্জাজনক সংস্কৃতি থেকে তাদের বেরিয়ে আসা উচিত। যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক। একটা চার্জশিট দেয়া হোক। এটা দ্রুততার ভিত্তিতে। আমি বলতে চাই আমাদের শিক্ষার্থীদের উচিত এবং আমাদের বিভাগ থেকে সেই চেষ্টাটা করা উচিত, যাতে অন্তত অতি দ্রুত একটা তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়। কেন একটার পর একটা তদন্ত কর্মকর্তা অফিস থেকে চলে যাবেন এবং ফাইলটা পড়ে থাকবে সেই ব্যাখ্যাটা আমরা তাদের কাছে চাইবো।’

মানববন্ধনে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শিহাবুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যাম্পাসের ভেতর একটি হত্যাকা- ঘটলো আর খুনিকে পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না, এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অপ্রত্যাশিত। মামলার তদন্ত বিষয়ে আমরা যতবারই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি তারা শুধু আমাদেরকে আশস্ত করেন। তারা শুধু, বলেন, তদন্ত চলছে। এভাবে আর কতদিন। আমরা দ্রুত লিপুর খুনিদের দেখতে চাই।

মানববন্ধনে বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের লিপু ছিলেন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের ড্রেন থেকে লিপুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ উদ্ধারের দিন তৎকালীন রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার, পিবিআই, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। লিপুকে হত্যা করা হয়েছিল বলে ওই সময় পুলিশ ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ওইদিন বিকেলে লিপুর চাচা মো. বশীর বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মরদেহ উদ্ধারের দিন লিপুর রুমমেট মনিরুল ইসলামকে আটক করা হয়। তিনদিন পর হত্যা মামলায় মনিরুলকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। কিন্তু ৮ নভেম্বর জজকোর্ট থেকে মনিরুল জামিন পায়। জামিনের আগে মনিরুলকে চারদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ডে মনিরুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যার রহস্য উদঘাটন সম্ভব বলে তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা অশোক চৌহান দাবি করেছিলেন। এরপরও হত্যাকা-ের কোন কূলকিনারা জানা যায়নি। এরমধ্যে ওই বছরের ডিসেম্বরে অশোক চৌহান বদলি হয়ে অনত্র চলে গেলে মামলার দায়িত্ব পান মতিহার থানার নতুন ওসি (তদন্ত) মাহাবুব আলম। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার এক মাসের মধ্যেই ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তরের আদেশ আসে। সিআইডিতে মামলাটির দায়িত্ব পান রাজশাহী সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক আসমাউল হক। তিনি পৌনে দুই বছর ধরে এই মামলার তদন্ত করলেও মামলাটির সম্পর্কে কোন অগ্রগতি জানাতে পারেননি। এরপর আবার সপ্তাখানেক আগে মামলাটির দায়িত্ব পেয়েছেন রাজশাহী সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক আজিজুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘আমি সপ্তাহখানেক হলো এ মামলার দায়িত্ব পেয়েছি। এখনো কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। তবে মামলার তদন্ত চলছে।’