মৃত্যু ডেকে আনে এই বাদ্যযন্ত্রের সুর!

পরপর সাজানো পানি ভর্তি ওয়াইন গ্লাস। সেগুলো বাজিয়ে চলেছেন এক মিউজিসিয়ান। সামান্য ভুল আর সবকটি গ্লাসই পড়ে ভেঙে যাবে। লন্ডনে এক কনসার্টে গিয়ে ওয়াইন গ্লাস নিয়ে সুরের এই কেরামতি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন আমেরিকার ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। যন্ত্র নিয়ে মশগুল থাকা বেঞ্জামিন ঠিক করলেন এমনই এক যন্ত্র বানাবেন।

গ্লাস আরমোনিকা বা গ্লাস হারমোনিকা। ৩৭টি ঘুরন্ত কাচের গ্লাস কতগুলো রডের উপর সাজানো। ১৭৬১ সালে সুরের এই মেকানিকাল ভার্সন তৈরি করেন ফ্রাঙ্কলিন। ইতালীয় শব্দ আরমোনিয়ার অর্থ হারমোনি। অনেকে তাই সুরযন্ত্রকে গ্লাস হারমোনিকাও বলেন। হারমোনিকার সুরে মেতে ওঠে গোটা বিশ্ব। আর তারপরই বেরিয়ে আসে তার ভয়াবহ রূপ।

যারা এই বাদ্যযন্ত্রের নিত্য শ্রোতা, তাদের মধ্যে নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে শুরু করে। নার্ভ, চোখ, মাথার অসহ্য যন্ত্রণার মতো নানা অসুখ তো বটেই, এমনকি মৃত্যুর খবরও পাওয়া যায়। গ্লাস হারমোনিকার নিত্যবাদকরা ও শ্রোতারা ঠিক এমনই অভিযোগ তুলতে শুরু করেন।

১৭৯৯ সালে চিকিৎসক অ্যান্টনি উইলিচ এই বাদ্যযন্ত্র নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। তিনি জানান, মস্তিষ্কের বিশেষ অংশকে অতি সক্রিয় করে তোলে এর সুর। ঘুমভাব, হ্যালুসিনেশন, প্যারালিসিস এমনকি মৃত্যুর ঘটতে পারে বেশি শুনলে। বেশ কিছু মনস্তত্ত্ববিদ দাবি করেন, আত্মহত্যার মানসিকতা জাগিয়ে তোলে এই বাদ্যযন্ত্র।

১৮০৮ সালে ভিয়েনায় একটা কনসার্টে গ্লাস হারমোনিকায় নিজের তৈরি সুর বাজাতে গিয়ে মঞ্চেই মৃত্যু হয় মারিয়ানা কির্চজেসনার নামে এক মিউজিসিয়ানের। মারিয়ানা জন্মান্ধ ছিলেন। ছোট থেকে মিউজিকই ছিল তার সবকিছু।

তৎকালীন সমালোচকরা মারিয়ানার মৃত্যুর জন্য ফ্রাঙ্কলিনের গ্লাস হারমোনিকাকে দায়ী করতে শুরু করেন।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও কয়েকটি হারমোনিকা রয়েছে। বিখ্যাত কয়েক জন সুরকার তাদের অ্যালবামে কিছু ক্ষণের জন্য এই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েওছেন।

ফ্রাঙ্কলিনের প্রকৃত গ্লাস আরমোনিকা বর্তমানে ফিলাডেলফিয়ায় ফ্রাঙ্কলিন ইনস্টিটিউটে রয়েছে। তবে সেটা সত্যিই অসুস্থতা এবং মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল কি না তা এখনও অজানাই থেকে গেছে।