জীবনবোধের আলোয় মোহনীয় ইত্যাদি

জীবন নিয়ে গভীরতর এক উপলব্ধি এনে দিল এবারের ইত্যাদি। সঙ্গে মানবিকতা বোধে উজ্জীবিত করার অসাধারণ অনুপ্রেরণা। ঝালকাঠির পাঁচ নদীর মোহনায় ধারণকৃত এ ইত্যাদি ধরা দিয়েছে মোহনীয় রূপে, অনন্য ও অনবদ্যতার মধ্য দিয়ে। ৩০ সেপ্টেম্বর বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচারিত এ ইত্যাদি ধরা দিল ভিন্নরূপে।

অনুষ্ঠানে সংগীতশিল্পী শফি মণ্ডল ও রবি চৌধুরীর গাওয়া গানটি ছিল মনে দাগ লাগার মতো! কথা, সুর, গায়কি-সবই অনন্য। যেখানে মানহীন ও বিকৃত রুচির গানের প্রতিযোগিতা তুঙ্গে, সেখানে হানিফ সংকেত তার অতলস্পর্শী মুনশিয়ানায় দেখালেন সংগীতের কী মহিমা! নোয়াখালীর সুবর্ণচরের সৈয়দ আহমদকে নিয়ে করা প্রতিবেদনটিও মানবতাবোধে উজ্জীবিত করে তোলে। নিজে ভ্যান চালিয়ে, দিনমজুরি দিয়ে যে জমি কিনেছেন, সেটাই তিনি দান করলেন একটি কলেজের জন্য। শিক্ষার আলো জ্বালাতে অষ্টম শ্রেণি পাশ করা সৈয়দ আহমদই এগিয়ে এলেন। ‘আপনারে লয়ে বিব্রত না থেকে’ দান করলেন এক একর জমি।

এমনই পরোপকারী আরেক ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেল নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায়। ইত্যাদি দেখিয়েছে, দূরদূরান্ত থেকে আসা পথিকের জন্য আব্বাস উদ্দিন সরকার গড়ে তুলেছেন মুসাফিরখানা। বিনা খরচে অতিথি আপ্যায়নের সুব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। ঝালকাঠির নারায়ণ চন্দ্র নামে এক ব্যক্তি কাঠমিস্ত্রি হয়েও নিপুণ হাতে কাঠে খোদাই করে তৈরি করেন নানা শিল্পকর্ম। পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন একটি পাঠাগার। শৈল্পিক ও মানবিক গুণের এক অসাধারণ সমন্বয়। একটি নাট্যাংশে দেখানো হলো, নিজের অনেক শাড়ি থাকা সত্ত্বেও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জন্য স্ত্রীর আরও শাড়ি চাই, আবার অনেকে জীবনের অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছেন ফেসবুকের স্ট্যাটাসে, তথা ভার্চুয়াল জগতে। এমন সব অনিয়ম-অসঙ্গতির কারণে মানসিক চাপ বেড়ে অসুস্থ হওয়া এক ব্যক্তি গেছেন এক ‘চিত্তপরামর্শকের’ কাছে। মূলত প্রতীকী এ অসুস্থ ব্যক্তিটিকে নিয়ে করা নাট্যাংশটি আমাদের সমাজের অসুস্থতা ও অনিয়মের দিকে বিদ্রূপের চরম তীর নিক্ষেপ করে। এ অসুস্থতার মাত্রা আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকেও গ্রাস করেছে। বর্তমানে কিছু সিনেমা বা নাটকে গালির ব্যবহার হচ্ছে। গালির সময় শুধু ‘টুট টুট’ শব্দের ব্যবহার করে সংস্কৃতির সুস্থ ধারাকে অসুস্থ করে তুলছেন কিছু কিছু অসাধু নির্মাতা। এ নিয়ে করা বিদ্রূপাত্মক ও ব্যাঙ্গাত্মক নাট্যাংশটি প্রশংসার দাবিদার।

ঝালকাঠি নিয়ে করা কয়েকটি প্রতিবেদনও বেশ নান্দনিকভাবে উঠে এসেছে। জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত সেই ধানসিঁড়ি নদী বিধৌত ঝালকাঠির শীতলপাটি গ্রাম, পেয়ারা বাগান ও ভাসমান পেয়ারা বাজার নিয়ে করা প্রতিবেদন ছিল বেশ চমকপ্রদ। তবে, শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের জন্মস্থানের ঐতিহাসিক বাড়িটির জরাজীর্ণ অবস্থা রীতিমতো বিস্ময়কর। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নামফলক থাকলেও সেটি পড়ে আছে অবহেলায়, অযত্নে। আশা করছি, ইত্যাদির প্রতিবেদন দেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদিকে নজর দেবেন।

এ ছাড়া এবারের ইত্যাদির দর্শক-পর্ব, আমেরিকার মিনিসোটা অঙ্গরাজ্য নিয়ে বিদেশি প্রতিবেদন, হাত-পায়ের হাড়ের নানা জটিল সমস্যায় এলিজারোভ পদ্ধতি নিয়ে করা প্রতিবেদনও যথেষ্ট তথ্যবহুল।