৫৪ বছর পর যশোর জংশনে যাত্রাবিরতি করলো কলকাতাগামী ট্রেন বন্ধন এক্সপ্রেস। তিন মিনিটের যাত্রা বিরতি শেষে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে ৩১জন যাত্রী নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কলকাতার সঙ্গে যশোরের যোগাযোগ আরও সহজ হলো। এটিকে মাইল ফলক হিসেবে দেখছেন যাত্রীরা।
এই জংশনের জন্য ২০০সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতি বৃহস্পতিবার খুলনা-কলকাতা রুটে যশোরে তিন মিনিট যাত্রা বিরতি করবে।জানা যায়, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বন্ধ হয়ে যায় ভারতের সঙ্গে রেলযোগ ব্যবস্থা। ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর খুলনা-কলকাতা রুটে বন্ধন এক্সপ্রেস নামে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এরপর থেকেই যশোরে যাত্রাবিরতির দাবি উঠে। সেই দাবি আজ পূরণ হলো।
যশোর রেলওয়ে জংশনের ম্যানেজার পুষ্পল কুমার চক্রবর্তী জানান, প্রতি বৃহস্পতিবার কলকাতা-খুলনা রুটে চালুকৃত ট্রেন যশোরে ৩ মিনিটের যাত্রা বিরতি করবে। যা আজ থেকে শুরু হলো। এই জংশনের জন্য ২০০টি সিট বরাদ্দ আছে। প্রথমদিন ৩১টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে এসি কেবিন ৭টি, এসি চেয়ার ২৪টি।
তিনি আরও বলেন, কলকাতাগামী যাত্রীদের জন্য ওয়েটিং রুমসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার অভাব রয়েছে। বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করি দ্রুত সমাধান হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার পর থেকে জংশনে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কলকাতার যাত্রী ও তার স্বজন ছাড়াও উৎসুক জনতার ভিড় ছিল লক্ষণীয়। ৫৪ বছর পর যশোর জংশন থেকে কলকতার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন দেখতে এত মানুষের ভিড়। খুলনা থেকে ছেড়ে আসা কলকাতাগামী ট্রেন বন্ধন এক্সপ্রেসের অপেক্ষায় যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার আফরোজা বেগম। তিনি জানান, পরিবারের সাত সদস্যের সঙ্গে কলকাতায় যাচ্ছেন। অপেক্ষায় আছেন কখন ট্রেন আসবে।
আফরোজা বেগম বলেন, আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। আজকের এই দিনে যশোর থেকে কলকাতা ট্রেন যাত্রা শুরু হলো। এটি যশোরবাসীর জন্য গর্বের। আমি নিজেও খুব খুশি। একদিনের পরিবর্তে দুইদিন ট্রেন সার্ভিস চালু হলে আরও সুবিধা হতো।
আরেক যাত্রী যশোর সদরের দেয়াড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানও কলকাতাগামী ট্রেনের যাত্রী। তিনি বলেন, যশোর থেকে ট্রেনে কলকাতায় যাচ্ছি। এটা ভাবতেই ভাল লাগছে। ট্রেনের টিকিটের দাম একটু কমালে ভাল হতো। আশা করি এই সার্ভিস জনপ্রিয় হবে।
কলকাতাগামী ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নন্দিত উদ্যোগে বৃহত্তর যশোরবাসীর জন্য খুবই উপকার হলো। এই জংশনে যাত্রীদের ওয়েটিং রুম নেই। জংশনকে আধুনিকায়ন করে সেবার মান আরও বাড়াতে হবে। তাহলে আরও জনপ্রিয় হবে। বর্তমানে দুই’শত সিট বরাদ্দ আছে। আমি মনে করি আগামি ৬ মাসের মধ্যে এখানে যাত্রীর সংখ্যা ৫শ হবে। ট্রেনে কোন লস হবে না। এজন্য রেলের কর্মকর্তাদের আরও আন্তরিক হতে হবে।
রেল স্টেশনের টিকিট কালেক্টরেট সাহিদা বেগম বলেন, ৩৫ বছর ধরে রেলে চাকরি করছি। দেশের অভন্তরীণ রুটের যাত্রা বিরতি ও ছেড়ে যাওয়ার সময় মাইকে ঘোষণা করি। এবারই প্রথম কোন বিদেশগামী ট্রেনের যাত্রা বিরতি ও ছেড়ে যাওয়া ঘোষণা করলাম। এটা আমার কাছে খুব ভাল লাগছে।