চট্টগ্রামে প্রতারক চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার

ফাঁদ পেতে তরুণীর সঙ্গে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়ের অভিযোগে একটি প্রতারক চক্রের হোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ।

চক্রের কবলে পড়া ইমরান নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর শনিবার ভোরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। পরে ইমরানের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে নেয়া হয়। আদালত তাদের কারাগারে প্রেরণ করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-দিদারুল ইসলাম প্রকাশ দিদার (৩৫), ফাতেমা ইয়াছমিন নিশি (২৮), বিথিত মাহমুদ মোস্তাফা সিফা (২৩) আনোয়ার হোসেন আনু (৪৪) ও রাকিব আল ইমরান (২৬)।

কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, গত ২রা মার্চ রাত ১০টার দিকে কাজীর দেউড়ি এলাকায় পুলিশ পরিচয়ে সিএনজি অটোরিকশা থামিয়ে ইমরান নামের ওই ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে যায় তারা। এরপর চোখ বেঁধে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পাঁচলাইশ থানাধীন চশমা হিল এলাকার একটি বাসায় নেয়া হয় তাকে।
সেখানে দুই নারীর সঙ্গে জোর করে আপত্তিকর অবস্থায় ছবি তোলা হয়। এসব ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ করবে এবং প্রাণে মেরে ফেলবে এমন ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে বিকাশে ৫০ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ৩রা মার্চ বিকেল ৫ টার দিকে ছাড়া পান ইমরান।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, শুক্রবার বেলা ১২টায় থানায় এসে অভিযোগ করেন ইমরান।

এরপর দিনভর পাঁচলাইশ, হালিশহর ও বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শনিবার ভোরে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) আবদুর রউফ বলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে গ্রেপ্তারকৃতরা। অভিযানে তাদের বাসার ড্রইং রুমে হালকা আসবাবপত্র দেখা গেলেও বাকি রুমগুলোতে কোন কিছুই ছিল না।

সুতরাং, বাসা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালারা সতর্ক থাকলে ও পুলিশের সহযোগিতা নিলে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মেহেদী হাসান বলেন, নগরে দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি চক্র নারীদের ব্যবহার করে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করে আসছিল। এরমধ্যে একটি চক্রের ৫ জনকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।

তাদের কৌশল ছিল নারীদের দিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী ও বিত্তশালী লোকদের প্রেমের ফাঁদসহ নানা কৌশলে বাসায় ডেকে বা ধরে নিয়ে গিয়ে অশ্লীল ছবি ও ফুটেজ ধারণ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া।
গত এক বছর ধরে এমন চমৎকার ব্যবসা করে আসছেন তারা। ওই চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে ইতোমধ্যে ৪০ থেকে ৫০ জন ব্যক্তি লাখ লাখ টাকা হারিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, মামলা দায়েরের পর আদালতে নেওয়া হলে আদালত তাদের কারাগারে প্রেরণ করে। এর আগেও গ্রেপ্তার দলনেতা দিদারের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে পাহাড়তলী থানায় দায়ের করা একটি মামলা আছে।

নিশির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ইপিজেড থানার একটি মামলা আছে। আনোয়ারের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে বায়েজিদ থানায় মাদক আইনে একটি, ২০১২ সালে কোতোয়ালী থানায় অস্ত্র আইনে এবং ২০১৫ সালে বায়েজিদ থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি করে মামলা রয়েছে।