ঘনঘন মত ও সিদ্ধান্ত বদলানোর জন্য পরিচিত জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ১৫ দিনের মাথায় নতুন এক সাংগঠনিক নির্দেশে ছোটভাই জি এম কাদেরকে ‘নিজের উত্তরসূরি’ হিসেবে ফিরিয়ে এনেছেন।
শনিবার সকালে নিজের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পুনরায় আমি জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী এবং সংশ্লিষ্ট সকল মহলের জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই, আমার অবর্তমানে বা চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিদেশে থাকাকালীন পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের-এমপি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’
এর পর গত ১৬ জানুয়ারি নিজ জেলা রংপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ৯০ বছর বয়সী সাবেক এই সামরিক শাসক ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর অবর্তমানে দলের হাল ধরবেন কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এরপর ২০ জানুয়ারি তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য যান। ফিরে আসেন ৪ ফেব্রুয়ারি। এরপর থেকে খুব বেশি অনুষ্ঠানে অংশ নেননি জাপা চেয়ারম্যান।
২০১৬ সালে এরশাদ জি এম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান করেন। এতে নাখোশ হন দলের ‘রওশনপন্থী’ হিসেবে পরিচিত নেতারা। পরে দলে রওশনকে দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান করেন এরশাদ।
কিন্তু গত ২২ মার্চ রাতে হঠাৎ করেই জি এম কাদের দল চালাতে ব্যর্থ হয়েছেন এমন কথা উল্লেখ করে দলের কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেন এরশাদ। পরে তাঁর বিরোধী দলের উপনেতার পদও কেড়ে নেওয়া হয়। তবে তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে বহাল ছিলেন।
এরশাদ ২২ মার্চের চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘আমি ইতিপূর্বে ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমার অবর্তমানে পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের পার্টি পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন এবং এটাও আশা করেছিলাম যে, পার্টির পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিল তাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবে। কিন্তু পার্টির সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আমার ইতিপূর্বকার সেই ঘোষণা প্রত্যাহার করে নিলাম। যেহেতু জনাব কাদের পার্টি পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন, পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে, এবং তিনি পার্টির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন পার্টির সিনিয়র নেতৃবৃন্দও তার নেতৃত্বে সংগঠন করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।’
এ নিয়ে দলের মধ্যে নানা আলোচনার মধ্যেই গত ৪ এপ্রিল জি এম কাদেরকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহাল করা হয়। সংসদ উপনেতার পদও ফিরে পান। এর আগে জাপা অধ্যুষিত রংপুরের প্রায় সব জেলা, মহানগর ও উপজেলার নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে গণপদত্যাগের হুমকি দেন।
তবে দলের ‘উত্তরসূরি’ প্রসঙ্গে নীরব ছিলেন জাপা চেয়ারম্যান। আজ সকালে পাঠানো ‘সাংগঠনিক নির্দেশে’ পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা মোতাবেক আগের সিদ্ধান্ত পুনর্বহাল করেন এরশাদ।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, “আমি আবারও জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের স্মরণ করে দিতে চাই যে, গত ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে আমার স্বাক্ষরিত ‘সাংগঠনিক নির্দেশনা’ যথা ‘আমি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে পার্টির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, আমার অবর্তমানে বা চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিদেশে থাকাকালীন সময়ে পার্টির বর্তমান কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের-এমপি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’ অত্র ‘সাংগঠনিক নির্দেশ’ দ্বারা পুনর্বহান করলাম।”