কেশবপুরে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকলেও ন্যায্য মূল্য নিয়ে সংশয়ে কৃষক

যশোরের কেশবপুরে সময় মত সার, বীজ, কীটনাশক কৃষকের হাতের নাগালে থাকায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ হেক্টর প্রতি উফশী ৬ মেট্রিকটন ও হাইব্রিড সাড়ে ৭ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করেছে। মাঠের সব ধান এক সাথে পাকার কারণে শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপর দিয়ে সম্প্রতি ৪/৫টি ঘূর্ণিঝড়সহ বৃষ্টিপাত হওয়ায় মাঠের ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষক।

শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে চলতি বছর প্রায় ২৬০ কোটি টাকার এক লাখ মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে উৎপাদিত ধানে সরকার নির্ধারিত মূল্য থেকে কৃষক ৮৫ কোটি টাকা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবে।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি ইরি বোরো মওসুমে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন বিলে ১৬ হাজার ৫‘শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বিভিন্ন মাঠে উফশী জাতের ব্রি-ধান- ২৮, ৫০, ৫৮, ৬৩, ৭৪, ৮১ সহ ৫ হাজার ৭‘শ ৭৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করা হয়। সার, বীজ কীটনাশক ছিল কৃষকের হাতের নাগালে। ডিজেল ও বিদ্যুতের সরবরাহ ছিল কৃষকের চাহিদা মত। সব মিলিয়ে এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি মন ধানের সরকারি মূল্য ১ হাজার ৪০ টাকা দরে ২৫৯ কোটি ৯৭ লাখ ৭২ হাজার টাকার এক লাখ মেট্টিক টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ধান বাজারে ওঠার সাথে সাথেই ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বর্তমান বাজারে প্রতিমন ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭‘শ টাকা দরে। সেই হিসেবে উৎপাদিত ধানের ৮৫ কোটি ১১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা কৃষক ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবে।

বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, আর এক সপ্তাহ পর উপজেলার সর্বত্রই শুরু হবে ধান কাটা ও মাড়াই মওসুম। গত বারের চেয়ে এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়-বৃষ্টি মওসুম এবার আগেভাগেই শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই বয়ে চলেছে এর প্রভাব। ধারাবাহিকভাবে বয়ে যাওয়া ঝড়ো বাতাসের সাথে বৃষ্টিপাতে ধান গাছ পড়ে যাচ্ছে। উৎপাদন খরচ গত বারের চেয়ে বেশী হয়েছে। এরপরও কৃষি শ্রমিকরা ধান কর্তনে মোটা অংকের দাম হাকাচ্ছে।

অন্যদিকে, নিচু এলাকার ক্ষেত হচ্ছে পানিতে নিমজ্জিত। প্রাকৃতিকভাবে এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি মানুষের সীমাহীন ক্ষতি হতে পারে। এ বছর ধানের দরপতনের কারণে কষ্টের ধানে শেষ পর্যন্ত উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা তা নিয়েও কৃষক সংশয়ে রয়েছেন।

বাশবাড়িয়া গ্রামের কৃষি মশিয়ার রহমাস বলেন, পাকা ধান ঝড়ে পড়ে যাবার কারণে এ বছর কর্তন খরচ গত বারের চেয়ে বেশী পড়বে। এ কারণে প্রতি বিঘা জমির ধান ঘরে তুলতে গৃহস্থের ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা ব্যয় হবে।

পাঁজিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মুকুল জানান, নদী খননের জন্যে তার ইউনিয়নের অধিকাংশ খালের মুখ বেঁধে দেয়া হয়েছিল। ফলে অনেক ঘেরের পানি নিষ্কাশন করতে ঘের মালিকরা ব্যর্থ হয়। এ কারণে অনেক ঘেরে এবার বোরো আবাদ সম্ভব হয়নি। ঝড় বৃষ্টির কারণে কিছু কিছু এলাকায় ধান গাছে খোলপচা ও পাতা ঝলসানো রোগ দেখা দেয়। তবে তা পরিমানে খুবই কম।

এদিকে গরুর প্রধান খাদ্য ধানের খড় (বিচালি) সংরক্ষণে কৃষকদের বেশ তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। হাবাসপোল গ্রামের কৃষক শহিদ হাসান জানান, বিচালি সংরক্ষন করার জন্য তিনি ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে ঘর তৈরি করেছেন। উপজেলার বাঁশবাড়িয়া, গোপসেনা, ধর্মপুর, ভোগতি, দোরমুটিয়া অঞ্চল ঘুরে দেখা যায় কিছু কিছু ধান কাটার উপযুক্ত হয়ে উঠায় কৃষকরা ধান বহনের জন্য ভ্যান গাড়ী, ধান কাটার কাচি, ধান ঝাড়ার ম্যাশিন প্রস্তুত করছে। তবে সম্প্রতি সময়ে কালবৈশাখী ঝড় ,বর্জ্রবৃষ্টিসহ মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া কৃষকের হাসি মাখা মুখ মলিন করে তুলছে।

কেশবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মহাদেব চন্দ্র সানা জানান, এ উপজেলার কোথাও কোথাও বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। আর ৮/১০ দিনের মধ্যে মাঠে ধান কাটার হিড়িক পড়ে যাবে। ইতোমধ্যে নতুন নতুন উফশী জাতের ধানের নমুনা কর্তন ও মাঠ দিবসের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। রোগের আক্রমন থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকদের বেশী মাত্রায় পটাশ সার ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল বলেই এবার বাম্পার ফলন হয়েছে।