‘ভারত থেকে বের করে দেয়নি, ভিসার মেয়াদ ছিল না’

‘আমাকে কেউ বের করে দেয়নি। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। কাজের চাপের কারণে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য যাওয়া হয়নি।’ বললেন গাজী আবদুন নূর। ভারতের বাংলা টিভি চ্যানেলের দর্শকদের কাছে এখন তিনি খুবই জনপ্রিয়। জি বাংলায় প্রচারিত জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’র রাজা রাজচন্দ্রের ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। বললেন, ‘সেখানে সবাই জানে, আমি বাংলাদেশের ছেলে। কিন্তু বাংলাদেশে অনেক দর্শকই তা জানতেন না। আমাকে নিয়ে এখানে কোনো পত্রিকায় তেমন কোনো খবর ছাপা হয়নি। কেউ কিন্তু আমাকে নিয়ে গর্ব করেনি। অথচ দেখেন, কলকাতার একটি ঘটনা নিয়ে এখানে খবরে সয়লাব হয়ে গেছে। সবাই লিখেছে, আমাকে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে।’

গাজী আবদুন নূর গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে এসেছেন। রাতে জানালেন, সন্ধ্যায় ভারত থেকে সড়কপথে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। তাঁর বাসা যশোর শহরের ঝুমঝুমপুর এলাকায়। তিনি এখন সেখানেই আছেন।

১৮ এপ্রিল ভারতের লোকসভা নির্বাচনে কলকাতার দমদম কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী সৌগত রায়ের প্রচার মিছিলে সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে যোগ দেন গাজী আবদুন নূর। এ ঘটনার পর কলকাতার অভিবাসন দপ্তর তাঁর ভিসাসংক্রান্ত তথ্য তদন্ত শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয়। এরপর ভিসার মেয়াদ না বাড়িয়ে বেআইনিভাবে অবস্থান করার দায়ে তাঁকে অবিলম্বে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গাজী আবদুন নূর বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের নাগরিক। ভারতে গিয়েছিলাম পড়াশোনা করার জন্য। এরপর সেখানে ছোট পর্দায় কাজ করার সুযোগ পেয়ে যাই। সেখানে অল্প দিনে দর্শক আমাকে গ্রহণ করেন। গল্প অনুযায়ী আমার চরিত্রটি অনেক দিন আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমার ব্যাপারে দর্শকের আগ্রহের কারণে জি বাংলা কর্তৃপক্ষ রাজা রাজচন্দ্রের চরিত্রটি বড় করে। এই সিরিয়ালে রাজা রাজচন্দ্র মারা গেছেন। আমি খুব ভালো করে জানি, সেখানে আমি কী করতে পারব আর কী পারব না। সেখানে লোকসভা নির্বাচনে প্রচারের জন্য আমি কেন যাব?’

কিন্তু কলকাতার পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে নির্বাচনী প্রচারণার মিছিলে সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে আপনাকে দেখে গেছে। এ প্রশ্নে গাজী আবদুন নূর বলেন, ‘মদন মিত্র আমাকে স্নেহ করেন। নিজের প্রয়োজনে সেদিন আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তিনি তখন নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন। আমাকে দেখে তিনি গাড়িতে উঠতে বলেন। তাঁর গাড়িতে কিছুক্ষণ ছিলাম। আমাকে দেখে আশপাশের সবাই চিৎকার করে ওঠেন। মদন মিত্র বললেন, দেখ দেখ, তোকে দেখে সবাই কী খুশি হয়েছে। ওদের দিকে তাকিয়ে একটু হাতটা নেড়ে দে। আমি যদি তৃণমূলের হয়ে প্রচারণায় অংশ নিতাম, তাহলে তো সেই দলের উত্তরীয় গলায় ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। কিন্তু আমি কি তা করেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সেখানেও তা বলেছি।’

ভারত ছাড়ার নির্দেশের ব্যাপারে গাজী আবদুন নূর বলেন, ‘এ সময় আমি এমনিতেই দেশে আসার পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম। কয়েক মাস একটু বিরতি নেব। কারণ, অনেক দিন “করুণাময়ী রাণী রাসমণি” সিরিয়ালে রাজা রাজচন্দ্রের চরিত্রে নিজেকে আটকে রেখেছিলাম। এবার সেই চরিত্র থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছি। নিজের লুকটাও পরিবর্তন করব। আর এই সিরিয়ালে কাজ করার ফলে অনেক দিন দেশে আসতে পারিনি। এবার কিছুদিন দেশে থাকব।’

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে গাজী আবদুন নূর বললেন, ‘হয়তো কলকাতায়ই কাজ করব। ১৫-২০টা কাজ করব না। আমার অনেক টাকার লোভ নেই। বাড়ি-গাড়ি হবে, তাও চাই না। আমি শুধু কিছু ভালো কাজ করতে চাই। সেখানে ভালো কাজের যে স্বাদ পেয়েছি, তা অসাধারণ!’

‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’ সিরিয়ালের জন্য শুধু ভারতের বাংলা টিভি চ্যানেলের দর্শকদের কাছেই নয়, বাংলাদেশের টিভির দর্শকদের কাছেও এখন খুব পরিচিত গাজী আবদুন নূর। তিনি বাংলাদেশের বাগেরহাটের ছেলে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা করেছেন সেখানেই। কলকাতায় যান ২০১১ সালে। তিনি মঞ্চনাটকের সঙ্গে জড়িত হন বাংলাদেশেই। বিবর্তন যশোরের সদস্য তিনি। এই দলের হয়ে ২০১১ সালে কলকাতায় যান। অনীক থিয়েটার আয়োজিত গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসবে ‘রাজা প্রতাপাদিত্য’ নাটক নিয়ে অংশ নেয় বিবর্তন যশোর। ওই সময় সেখানে নাটক নিয়ে পড়াশোনা করার ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি হয়। যোগাযোগ করেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। নাটক নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়ে যান। পরের বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রামা বিভাগে ভর্তি হন। সাফল্যের সঙ্গে স্নাতক শেষ করার পর স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভারত সরকারের আইসিসিআর বৃত্তি পান। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন।

এবার জানালেন, ঊনবিংশ শতকের থিয়েটার নিয়ে তিনি পিএইচডি করছেন। এমন কয়েকজনকে নিয়ে কাজ করছেন, থিয়েটারে যাঁদের অসামান্য অবদান রয়েছে, কিন্তু তাঁদের কথা অনেকেই জানেন না।

বাংলাদেশের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন গাজী আবদুন নূর। নাম ‘যৈবতী কন্যার মন’। সেলিম আল দীনের কাহিনি থেকে ছবিটি তৈরি করেছেন নারগিস আক্তার। ছবিটি শিগগিরই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার কথা আছে।