গৃহবধূ ছিনতাই করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার যুবলীগ নেতা

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় সংখ্যালঘু পরিবারের এক গৃহবধূকে ছিনতাই করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন যুবলীগ নেতা আবদুল খালেক। শনিবার দুপুরে সাটুরিয়ার ভান্ডারীপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৭ জন আহত হন। আহতদের সাটুরিয়া হাসপাতাল ও সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সাটুরিয়া থানায় একটি মামলা করেছে সংখ্যালঘু পরিবার।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সাটুরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল খালেক ও যুবলীগের কর্মী শাহীনুর ইসলাম ভান্ডারীপাড়ার দীপক বসাকের স্ত্রী টুম্পাকে ছিনতাই করতে যায়। এ সময় যুবলীগ নেতা খালেকের সঙ্গে টুম্পার স্বামী দিপকের কথা কটাকাটি হয়।

একপর্যায়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হলে দীপকের পরিবারের সদস্যরা যুবলীগ নেতা আবদুল খালেককে ঘরে তালা দিয়ে রাখে।

এ সময় আঘাতে তার মাথার একাধিকস্থানে ফেটে যায়। এতে গুরুতর আহত হলে তাকে সাটুরিয়া হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

এদিকে যুবলীগ নেতাকে মারধরের খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই হিন্দু পরিবারে হামলা করে খালেকের সমর্থকরা। হামলাকারীরা দ্বিপ বসাক, দীপক বসাক, দিনেশ বসাক ও দুলাল বসাককে মারধর করে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাদের সাটুরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করেন।

টুম্পা বসাকের স্বামী দীপক জানায়, তার স্ত্রী টুম্পা বসাক একটি বেসরকারি স্কুলে চাকুরি করেন। প্রায় দুই বছর ধরে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে যুবলীগ নেতা আবদুল খালেক তাকে উক্ত্যক্ত করে আসছিলো। মাঝে মধ্যে বিষয়টি আওয়ামী লীগ নেতাদের জানানো হলেও কোন লাভ হয়নি। যুবলীগ নেতার অত্যাচারে আমার স্ত্রী কিছুদিন আগে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল।

টুম্পার স্বামী জানান, গতকাল শনিবার যুবলীগ নেতা খালেক আমার বাসায় গিয়ে বলেন, তোর স্ত্রী তোকে তালাক দিয়ে আমাকে বিয়ে করেছে। এ সময় বিয়ের প্রমাণ দেখতে চাইলে তিনি একটি স্বাক্ষরবিহীন স্ট্র্যাম্প দেখিয়েই আমার স্ত্রীর হাত ধরে দুই তলা থেকে নিচে টেনে হেঁচড়ে নামাতে থাকেন। তখন খালেকের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে যুবলীগ নেতার সঙ্গে ধস্তাধস্তি হলে তিনি পড়ে যান। এতে মাথায় আঘাত পান।

গৃহবধূ টুম্পা বসাক অভিযোগ করে বলেন, আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে একাধিকবার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে যুবলীগ নেতা আবদুল খালেক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আমাকে রাস্তায় উক্ত্যক্ত করে আসছিলেন। এ ব্যাপারে একাধিকবার সাটুরিয়া থানাকে অবগত করা হয়েছে। যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে থানায় এর আগেও একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল। এরপরও থেমে নেই। আমরা হিন্দু বলে আমাদের ওপর নির্যাতন প্রতিরোধ করার কেউ না থাকায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করেছি। আমি ও আমার পরিবার ওই যুবলীগ নেতার হাত থেকে বাঁচতে চাই বলেও আকুতি জানান তিনি।

টুম্পার বাবা দিনেশ বসাক বলেন, আমরা সংখ্যালঘু বলে যুবলীগ নেতা আবদুল খালেকের ভয়ে চুপচাপ ছিলাম। সে আমাকেও হুমকি-ধামকি দিয়েছে। আমার মেয়ের নামে কিছু জমি আছে। সে জমি ওই যুবলীগ নেতা দখল করে নিতে চায়। নিরুপায় হয়ে সাটুরিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে এ ব্যাপারে অনেকবার অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। সে শনিবার বাসায় এসে আমার মেয়েকে তুলে নিতে গেলে এ সংঘর্ষ হয়।

এ ব্যাপারে জানতে যুবলীগের নেতা আবদুল খালেকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলে তিনি ফোন ধরেন নি।

এদিকে সাটুরিয়া আওয়ামী লীগের উচ্চপদস্থ নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তারা যুবলীগ নেতা খালেকের বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। উপজেলা নেতারা শুধু এতটুকু বলেন, এ বিষয়ে তাকে একাধিকবার বলা হলেও তিনি দল বা আমাদের কথা রাখেন নি।

সাটুরিয়া থানার ওসি মো. মতিয়ার রহমান বলেন, দীপক বসাক নামে একজন তার স্ত্রীর শ্লীলতাহানীর অভিযোগ এনে একটি মামলা করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ওসি।