ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফনি, যশোরে কৃষকের মুখে হতাশার ছায়া

দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বাম্পার ফলন হয়েছে বোরো ধানের। জমিতে বাতাসে দুলছে সোনালি ফসল। কৃষকের বুক ভরা স্বপ্ন। তারপরও আনন্দের মধ্যে উদ্বিগ্নতা চাষীদের। আসছে ঝড় ফনি এ সংবাদে বোরোর বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। তাদের মুখে হতাশার কালো ছায়া। আবহাওয়াবিদদের মতে শুক্রবার সকাল থেকে বাংলাদেশে এর প্রভাবে বৃষ্টি এবং ঝড়ে বাতাস থাকবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে পুরো ধান গোলায় উঠানো নিয়ে যত দুশ্চিন্তা কৃষক।

যশোরের মাঠের পর দোল খাচ্ছে বোরো ধান। বোরো ধানের দোলনীতে যেন কৃষকের স্বপ্ন দুলছে। পাকা ও আধপাকা সোনালী ফসল বোরো ধান মন কাড়ছে সকলের।

চাষীরা এখন বোরো ধান নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলছে ধান কাটা ও মাড়াই। এমন দৃশ্যে চাষীরা আনন্দিত। এমন স্বপ্ন প্রত্যাশায় উদ্বেলিত কৃষককূল। তবে গত কয়েক দিনের আবহাওয়া সংবাদ তাদেরকে করে তুলেছে অস্থির। এ অবস্থায় বেড়েছে শ্রমিকের চাহিদা ও দাম।

কৃষকরা জানান, জমিতে শতকরা ৭০-৭৫ ভাগ ধান পেকে গেছে। বর্তমান আবহাওয়ার কারণে ধান ঘরে তোলা নিয়ে তারা উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছেন। এখন আকাশে মেঘের আভা আর ঝড় হাওয়া দেখলেই তাদের যত দুশ্চিন্তা। কারন আসছে ঝড় ফনি। এ কবলে পড়ড়ে তাদের স্বপ্নের সোনালী ফসল ওবারোসহ সহায় সম্বল হারিয়ে যাবে।

এ এলাকার মানুষের জীবীকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে কৃষি। বোরো ধান তাদের অন্যতম চাষাবাদ। তাই বছর জুড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খাওয়া বাঁচার একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে বোরো ধান। তাই জীবন জীবীকা নিয়ে তাদের স্বপ্ন প্রত্যাশা এই বোরো ধানকেই ঘিরে।

সরজমিনে মনিরামপুর কেশবপুর শাহপুর, চাঁচড়া, মাহিদিয়া, ত্রিমোহনী গোপসেনাসহ কয়েকটি মাঠে গেলে চোখে পড়ে বোরো ধান কাটার দৃশ্য। ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে রাত দিন ব্যস্ত চাষীরা। কাটা বোরো ধান মেশিন দিয়ে মাড়াই করা হচ্ছে।

এ সময় মাঠে কথা হয় কৃষক আবুর হোসেন, চাদঁ মিয়া, হাসান, রাজ্জাকসহ অনেকের সাথে। তারা জানান, এবছর বোরো ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু পুরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। আকাশে মেঘ ও বাতাস উঠঠে তাদের ভয় হচ্ছে।

তবে কৃষকরা জানান, এবছর ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারনে অর্ধেক চিটা হয়ে গেছে। আর ধানের দাম নিয়ে তারা হতাশ। আর শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ার তারা ঝড়ের আগে ধান ঘরে তুলতে পারবে কি তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সদর উপজেলার কৃষক হাসান জানান, দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে ধান চাষ করে তিনি ৩৬ মণ মিনিকেট (জিরে) ধান পেয়েছেন। এ ধান আড়তে ৭৪০ টাকা দরে বিক্রি করে ২৬ হাজার ৬৪০ টাকা পাচ্ছেন। অথচ লিজের টাকাসহ চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। ফলে তিন হাজারের বেশি ক্ষতি হয়েছেন। বর্গাচাষি কাওছার শেখ চরম বিপাকে পড়েছেন ধান নিয়ে। ২ বিঘা জমিতে তিনি পাঞ্জাব মিনিকেট করে গড়ে প্রতি বিঘায় ১৮ মণ ফলন পেয়েছেন। সেচ খরচসহ জমির মালিককে ৮ মণ বিঘা প্রতি ধান দিয়েছেন। ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে যশোরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।

যশোর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর যশোর জেলায় ১ লাখ ৬২ হাজার ৬৩৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ধানের ফলন ভাল হয়েছে। কৃষি কর্মকতারা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়াতে ধান ৮০ ভাগ পেকে গেলেই কৃষককে ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছি।