মধ্যরাতে খুলনায় পৌঁছাতে পারে ‘ফণী’

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আজ শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার পর খুলনাসহ দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয় ঘূর্ণিঝড়টি মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে ভারতের ওডিশা রাজ্যে ‘ফণী’র তাণ্ডব শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানকার পুরি উপকূলে প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়েছে বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়। সেখানে ছয়জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দুপুরের পর থেকে। কিছুটা দুর্বল হয়ে মধ্যরাত নাগাদ সেটি খুলনা ও সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়ার সবশেষ ওই বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিটি ‘ফণী’ সম্পর্কে ৩৯তম বার্তা।

আবহাওয়ার সবশেষ বার্তায় বলা হয়েছে, ‘উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ সামান্য উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (২১ দশমিক ৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৬ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওডিশা উপকূল ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। সন্ধ্যা ৬টায় মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কি.মি. পশ্চিমে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কি.মি. পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার মধ্যরাত নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় আঘাত হানতে পারে। খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আজ সকাল থেকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হয়েছে।’

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কি.মি. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

কক্সবাজারকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।