যশোরের কেশবপুরের জনগণ অজানা আতঙ্কে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। একটি কুচক্রীমহল সুপরিকল্পিতভাবে মহিলাদের মাধ্যমে গোটা উপজেলা ব্যাপী গুজব ছড়াচ্ছে। তারা বলছে, দুটি মাইক্রোবাসে করে একটি বোরকা পরিহিত বাহিনী এলাকায় ঢুকে বাড়ির সকলকে জিম্মি করে মহিলাদের সম্ভ্রমহানিসহ ধন-সম্পদ লুটে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক এলাকার জনগণ রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন বলেও খবর রটানো হচ্ছে। বাস্তবে এর কোন ভীক্তি না থাকলেও গত এক সপ্তাহ ধরে এ গুজব গোটা উপজেলা ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় ছাত্রী, মহিলাসহ অভিভাবকরাও আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।
জানা গেছে, বেশ কয়েকদিন ধরে খবর রটছে দুটি মাইক্রোবাসে করে একটি বোরকা পরিহিত বাহিনী এলাকায় ঢুকে বাড়ির সকলকে জিম্মি করে মহিলাদের সম্ভ্রমহানিসহ ধন-সম্পদ লুটে নিয়ে যাচ্ছে। এমন খবরে আতঙ্কিত গ্রামাঞ্চলের মহিলারা সন্ধ্যা নামার সাথেই ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা, জানালা বন্ধ করে দিচ্ছে। এসব এলাকার পুরুষেরা মহিলাদের সম্ভ্রম ও ধন-সম্পদ রক্ষায় সন্ধ্যার পরই বাজার সওদা সেরে বাড়ি ফিরছেন।
উপজেলার লহ্মীনাথকাটি গ্রামের জিয়াউর রহমান জানান, মঙ্গলবার শিকারপুর গ্রামে এক মহিলা ওই বাহিনীর হাতে ধর্ষনের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনা এলাকায় রটে গেলে মহিলাদের সম্ভ্রম ও ধন-সম্পদ রক্ষায় ১ মে থেকে পাহারা দেয়া শুরু হয়েছে।
মির্জাপুর গ্রামের তুহিন বলেন, শুনেছি বিভিন্ন এলাকায় নাকি ওই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এ কারণে তাঁর মহল্লায় মিটিং করে একে অপরের কাছে মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছে। কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সাথে সাথেই মোবাইলের মাধ্যমে সবাই জড়ো হয়ে প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শ্রীফলা গ্রামের আব্দুল খালেক বলেন, তাঁর গ্রামে গত ১ সপ্তাহ ধরে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এখনও পাহারা দেয়া শুরু না হলেও খুব তাড়াতাড়িই শুরু করা হবে। তবে এ ব্যাপারে জনগণ যথেষ্ট সচেতন রয়েছে।
শিকারপুর গ্রামের মেম্বার মনিরুজ্জামান মনির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে এলাকায় রটে যায় শিকারপুর কদমতলার আকরামের স্ত্রীর হাত ধরে নাকি কারা টানাটানি করেছে। এ নিয়ে ব্যাপক চেচামিচি হয়েছে। পরের দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে এর কোন সত্যতা মেলেনি। এমনকি থানা পুলিশও খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
সরেজমিনে মজিদপুর, হাসানপুর, বিদ্যানন্দকাটি ও মঙ্গলকোট ইউনিয়ন ঘুরে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা শুধু গুজবের কথা শুনেছেন। বাস্তবে কোন নারীর সম্ভ্রমহানী বা ডাকাতি হয়েছে এর কোন সঠিক তথ্য কেউ দিতে পারছে না। এ ধরনের অপপ্রচার কারা রটাচ্ছে তাও কেউ বলতে পারছে না। উপজেলা ব্যাপী জনগণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে একটি মহল অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।
কেশবপুর থানার ওসি মো. শাহিন বলেন, বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের ঘটনা শুনে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। একটি মহল এলাকাকে অস্থিতিশীল করে পুলিশকে ব্যাকফুটে নেয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই মহিলাদের দিয়ে ওই অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভীতি দূর করতে এলাকায় উঠান বৈঠক, সভা, সমাবেশ করা হচ্ছে। পাশাপাশি এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং গ্রাম পুলিশরাও একই কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, যারা এর সাথে জড়িত অচিরেই তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।