বিটিআরসি’র গণশুনানিতে অপারেটরদের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃক জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ‘টেলিযোগাযোগ সেবা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রম’ সম্পর্কিত বিষয়ে বুধবার রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশন অব বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে প্রায় ৫০০ জন অতিথির উপস্থিতিতে এক গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তবে এ গণশুনানিতে বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের পক্ষপাতিত্ব করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গণশুনানিতে অংশ নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, প্রায় তিন বছর পূর্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানির অভিযোগ আজ কেন প্রকাশ করা হচ্ছে? বিটিআরসি’র গণশুনানির ৯০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের নিয়ম থাকলেও বিটিআরসির কেন এ ধরণের বাধ্যবাধকতা নেই? সেই সঙ্গে আজ গ্রাহকরা অপারেটরদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন, তার পক্ষে অপারেটররা মতামত না দিয়ে কমিশন কেন তাদের পক্ষপাতিত্ব করছে?

ভয়েস কলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে কমিশনের কাছে জানতে চাইলে কমিশনের উত্তর বিশ্বের দুই-একটি দেশ ছাড়া বাংলাদেশের কলরেট সবচেয়ে কম। এমএনপি’র ডিপিং চার্জ কেন? এর উত্তরে কমিশনের বক্তব্য বিষয়টি ভবিষ্যতে খতিয়ে দেখা হবে। ফোরজি সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে স্পেকট্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু স্পেকট্রামের উচ্চমূল্যের কারণে অপারেটররা নিলামে প্রয়োজনীয় স্পেকট্রাম কিনছে না।

এ বিষয়ে কমিশনের কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নাই। ফোরজি’র গতি নিয়ে কমিশনের বক্তব্য ফোরজি সেবা পেতে আরও সময় লাগবে। ফাইভজি নিয়ে গ্রাহকদের মতামত নেওয়া হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে কমিশন বলেন বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে ৬ মাসের মধ্যে ফাইভজি চালু করা হবে।

প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করার দাবী জানালে কমিশনের উত্তর সামাজিক উন্নয়ন তহবিলের অর্থ দিয়ে হাওর ও দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ফিক্সড ইন্টারনেট ব্যবসায় নৈরাজ্য ও মূল্য নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কমিশন এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে গণশুনানিতে জানান। সাড়ে সাত লাখ রিটেইলারকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রতি জেলায় বিটিআরসি’র কার্যালয় ও লোকবল নিয়োগ করে তদারকির তাগিদ জানান।

গণশুনানিতে বিটিআরসি’র লাইসেন্সধারী বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের দায়িত্বপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক, কমিশনার (স্পেকট্রাম) মো. আমিনুল হাসান, কমিশনার (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস) মো. রেজাউল কাদের, কমিশনার (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস) প্রকৌ: মো. মহিউদ্দিন আহমেদ এবং কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মহাপরিচালকরা নিবন্ধিত অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে মতামত প্রদান করেন।

এছাড়া সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা, ভোক্তা অধিকার সংঘ, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন, বিটিআরসি’র লাইসেন্সধারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও তাদের অ্যাসোসিয়েশন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৪ মে থেকে ৩ জুন বিটিআরসির ওয়েবসাইটের নিবন্ধনের মাধ্যমে ২০২ জন গ্রাহক মোট এক হাজার ৩১৯টি প্রশ্ন/অভিযোগ/মতামত কমিশনকে অবহিত করেন। পরবর্তীতে গণশুনানি সংশ্লিষ্ট কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাই করণের মাধ্যমে ১৬৫ জনকে শুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।

প্রশ্নসমূহের মধ্যে মোবাইল অপারেটরদের কলড্রপ ও বিভিন্ন প্যাকেজ (ভয়েস, ডাটা বান্ডল) এবং এর মূল্য সম্পর্কে অভিযোগ ছাড়াও বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন, সাইবার অপরাধ, মোবাইল ফোনে হুমকি, ফেসবুক ব্যবহারে নিরাপত্তা, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, ফাইভজি, অ্যামেচার রেডিও সার্ভিস, মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি, মোবাইল অপারেটরদের কল সেন্টারের মাধ্যমে সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য টেলিকম সেবাপ্রদানকারী লাইসেন্সিদের সেবা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত ছিল।

উপস্থিত সকলের অংশগ্রহণে প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপি এক প্রাণবন্ত গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া গ্রাহকগণের সরাসরি উত্থাপিত সম্পূরক অন্যান্য প্রশ্নাবলী যা সময় সংকীর্ণতার কারণে উত্তর প্রদান করা সম্ভব হয়নি তাঁর উত্তর পরবর্তীতে বিটিআরসি’র ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়। গণশুনানির শেষভাগে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক সার্বিক বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।